নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: কথায় বলে রাজনীতি সম্ভাবনার শিল্প। এখানে শেষ বলে কিছু নেই। দলবদলের রাজনীতির হাত ধরে আবার খবরের শিরোনামে দুলাল বর। উত্তর ২৪ পরগনার একেবারে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা বাগদার বিতর্কিত বিধায়ক তিনি। কখনও তৃণমূল, কখনও কংগ্রেস ছেড়ে ফের তৃণমূল। তবে এবার গতিপথ বদলে রাজনৈতিক গডফাদার মুকুল রায়ের হাত ধরে সোজা বিজেপিতে যোগ দিলেন দুলাল।
যে যাই বলুক না কেন লক্ষ্য একটাই বিজেপিতে নাম লিখিয়ে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে যদি একটা টিকিট পাওয়া যায়। না বিরোধীরা নয়, একথা বলছেন তাঁর এলাকার সাধারণ ভোটাররা। তাঁদের যুক্তি, প্রত্যেকবার ভোটের আগেই দলবদল যেন দুলালের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকার ভোটাররা অবশ্য দুলালের দলবদলকে নীতিহীনতা হিসেবেই দেখছেন। এমনিতে বাগদার ভূমিপুত্র দুলালের গ্রহণযোগ্যতা পূর্বে অনেকটা থাকলেও বর্তমানে ঘনঘন দলবদলে তা বেশ তলানিতে। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই একেবারে নিজস্ব করিশ্মায় তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে ফরোয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক কমলাক্ষী বিশ্বাসকে হারিয়ে বিধায়ক হন দুলাল। সেই থেকেই শুরু।
বিগত বাম সরকারের শেষ দিকে বিধানসভা ভাঙচুরের ঘটনায় প্রথমবার খবরের শিরোনামে আসেন তিনি। এরপর স্বজনপোষণের অভিযোগে বাগদায় দুলালকে সরিয়ে ২০১১ সালে উপেন বিশ্বাসকে তৃণমূলের টিকিট দেন নেত্রী। ওই থেকেই ক্রমশ তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় দুলালের। তবে উপেন বিশ্বাস মন্ত্রী থাকাকালীনই বাগদায় সমান্তরাল লবিবাজি চালিয়ে নিজস্ব রাজনৈতিক স্বত্তা জারি রাখেন তিনি। এমনকী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আলাদাগোষ্ঠীও তৈরি করেন।
[‘স্বামীর অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে চাই’, প্রতিজ্ঞা নিহত বিধায়কের স্ত্রীর]
তৃণমূলে থাকাকালীন বরাবরই মুকুল ঘনিষ্ট বলে আলাদা পরিচয় ছিল দুলালের। ২০১৬ সালে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে সিপিএম-কংগ্রেস জোটের হয়ে কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়িয়ে উপেন বিশ্বাসকে হারিয়ে দেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেস বিধায়ক থাকাকালীনও মুকুল রায়ের সঙ্গে সম্পর্কে ছেদ পড়েনি কখনও। গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে আবার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত ধরে তৃণমূলে ফেরেন দুলাল বর। তবে মুকুল রায় বিজেপিতে আসামাত্রই বাগদার মানুষ ভেবেই নিয়েছিলেন যে কোনওদিন দুলাল চলে যেতে পারেন বিজেপিতে। কারণ, এটাই স্বভাব তাঁর।
তাঁদের সেই চিন্তাই সত্যি হল মঙ্গলবার। মুকুল রায়ের হাত ধরে রাজ্যের এক সাংসদ ও এক বিধায়কের পাশাপাশি বিজেপিতে যোগ দিলেন বাগদার কংগ্রেস বিধায়ক দুলাল বর। এদিকে এদিনই বনগাঁ লোকসভায় পুরনো সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের নামই প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করলেন তৃণমূল নেত্রী। বিজেপি অবশ্য এখনও পর্যন্ত বনগাঁ লোকসভার প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। কারওর কারওর ধারণা, মমতাবালা ঠাকুরকে টক্কর দিতে ও মতুয়া ভোটে ভাগ বসাতে শান্তনু ঠাকুরকে বনগাঁ লোকসভায় প্রার্থী করতে পারে বিজেপি। তাহলে দুলালের কী হবে?
মাত্র কদিন আগেই প্রার্থী না পেয়ে মুকুল রায় প্রার্থী ভিক্ষা করছেন বলে কটাক্ষ করেছিলেন তৃণমূল নেতারা। এমনকী তৃণমূল ভাঙিয়েই দল বাড়াতে হবে বলে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভোকাল টনিক দেয়। সেই কারণেই কি দুলালের দলবদল নাকি বনগাঁ বাদে অন্য কোনও জায়গায় দুলাল বরকে প্রার্থী করা হতে পারে? এর উত্তর অবশ্য ভবিষ্যৎ দেবে। কিন্তু, দুলালের বারবার দলবদলকে মোটেও ভাল চোখে দেখছেন না এলাকার সাধারণ মানুষ।
যদিও দুলাল বর জানান, তৃণমূলে তিনি যোগ্য সম্মান পাচ্ছিলেন না। তাই এই দলবদল। অন্যদিকে দুলালের দলবদল প্রসঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, এ ঘটনায় বিচলিত নই। এতে দলে কিছুই প্রভাব পড়বে না। আর এ নিয়ে আমরা ভাবছিও না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.