নব্যেন্দু হাজরা, দুর্গাপুর: “দাদা, কাকে ভোট দেব বলুন তো! সবাই তো ভোট চাইতে আসে। বিধানসভায় যাকে দেখে কংগ্রেসকে ভোট দিলাম, এবার সে এল তৃণমূলের হয়ে ভোট চাইছে! এদিকে, শুনেছি সে না কি এখনও কংগ্রেসের বিধায়ক।” দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারে চায়ের দোকানে বসে আলোচনায় মত্ত ডিএসপি’র কয়েকজন কর্মী। কার পাল্লা ভারী, কে কত ভোট কাটবে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে তখন। কান পাততে বোঝা গেল, তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম প্রার্থীদের থেকেও দুর্গাপুরের ভোটে বেশি আলোচনা চলছে কংগ্রেস বিধায়ক বিশ্বনাথ পারিয়ালকে নিয়ে। তাঁকে ঘিরেই চায়ের দোকান চলছিল আলোচনা। বরাবরই শিল্পাঞ্চলের রাজনীতিতে পরিচিত নাম বিশ্বনাথ। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল, ফের কংগ্রেস, আর এখন ফের অলিখিতভাবে তৃণমূলে। আর এত দলবদলই বাঁকা চোখে দেখছে দুর্গাপুরের মানুষ।
[আরও পড়ুন: বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে খুন, চাঞ্চল্য শিলিগুড়িতে]
তাঁদের প্রশ্ন, একজন ব্যক্তি কংগ্রেসের এমএলএ। বলা ভাল, কংগ্রেস-সিপিএম জোট যখন হয়েছিল, সেই সময়কার ভোটারদের ভোটে জয়ী বিধায়ক। এখনও তিনি বিধায়কই। অথচ প্রচারে বেরিয়ে তৃণমূল প্রার্থীদের জোড়া ফুলে ভোট দেওয়ার আবেদন করছেন। শুধু তাই নয়, তিনি আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতিও। উনি কংগ্রেস নাকি তৃণমূল, মানুষ তাই বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, যেহেতু দুর্গাপুরের ভোট অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয় শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবারের ভোটের উপর, তাই এক্ষেত্রে তাঁদের নেতা বিশ্বনাথ পারিয়াল একটা বড় ফ্যাক্টর। তিনি যখন যে দলে থাকেন, সেই দিকে ভোট বেশ খানিকটা সুইং করে। অন্তত কারখানার শ্রমিকদের ভোট। আর সেটা জেনেই কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে নিজের মতো করে দলবদল-এর কথা ভাবতে পারেন বিশু।
বিশ্বনাথ ২০১৬ সালে কংগ্রেস-সিপিএমের জোট প্রার্থী হিসাবে ভোটে হারান তৃণমূলের প্রার্থী অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের দাবি, ভোটে জেতার পর থেকেই কংগ্রেসের এই বিধায়ক তৃণমূলের দিকে ঝুঁকতে থাকেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এখনও যোগ দেননি তৃণমূলে। এরই মধ্যে আইএনটিটিইউসি’র বর্ধমান জেলা সভাপতির পদ পেয়েছেন তিনি। অথচ কংগ্রেসের বিধায়ক পদ ছাড়েননি। ২০১৭ সালে পুরসভা ভোটে তাঁর স্ত্রী ৩০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে জিতে কাউন্সিলর এবং মেয়র পারিষদ হন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বনাথ পারিয়ালের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ আরও নিবিড় হয়। সব জায়গায় তৃণমূলের হয়েই তাঁকে দেখা যেত। কিন্তু কংগ্রেসের এমএলএ হয়ে তৃণমূলের সৈনিক হন কীভাবে?
প্রসঙ্গে বিশ্বনাথবাবু জানান, শ্রমিক সংগঠন একটা অটোনোমাস বডি। শ্রমিকদের ভাল করতে তাই তিনি আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতি পদে বসেছেন। কিন্তু তৃণমূলের প্রচারে তিনি কেন? বিশুবাবুর জবাব, “আমি তৃণমূল স্তরে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। তাই তৃণমূলের ছিলাম, এখনও আছি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে তৃণমূলের প্রার্থীদের ভোটে জেতানোর আবেদন করছি। অনেকেই তো কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে গিয়েছেন আমার আগেও। যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিধায়ক পদ ছাড়তে হয়েছে। আমি তো প্রার্থী নই। তাই এমএলএ হিসাবে এখনও কংগ্রেসেই রয়েছি। দল এনিয়ে আমায় কিছু বলেনি।” তাহলে কংগ্রেসের এমএলএদের নিয়ে যদি বৈঠক হয় তবে কি যাবেন? তাঁর জবাব, “না যাব না। আমি এখন তৃণমূলের সৈনিক। আর তাই থাকব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.