নন্দন দত্ত, সিউড়ি: নির্বাচনী মরশুমে ফের দলবদল৷ প্রত্যাশামতোই তৃণমূলে যোগ দিলেন বীরভূমের প্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভাপতি, প্রদেশ কংগ্রেস কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। রবিবার তাঁর হাতে পতাকা তুলে দিয়ে দলে স্বাগত জানান তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। জিম্মিকে দলের সৈনিক অ্যাখ্যা দিয়ে দলের সংখ্যালঘু দপ্তরের জেলা চেয়ারম্যান ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব তাঁকে দিয়েছেন অনুব্রত৷ তিনি বলেন, ‘আমি রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির সঙ্গে কথা বলে জিম্মিকে দলে স্বাগত জানিয়েছি। তাঁকে যে পদ এবং দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার সমস্ত কাগজপত্র দ্রুত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। উনি আমাদের দলে যোগদান করায় আমাদের শক্তি বৃদ্ধি হল৷’
এ দলবদলের সঙ্গে সঙ্গে বীরভূমের হাতশিবিরের সঙ্গে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি জিম্মির প্রায় তিন দশকের সম্পর্ক ছিন্ন হল। ছাত্রাবস্থা থেকে ডানপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। ছাত্র পরিষদের রামপুরহাট ইউনিটের সভাপতি ছিলেন। সেসময় ছাত্র আন্দোলন করে তিনি কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্বের চোখে লড়াকু নেতা হয়ে ওঠেন। এরপরেই ১৯৮৬ সালে ছাত্র নেতা হিসাবে প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি তাঁকে রামপুরহাট পুরসভার টিকিট দেন৷ জিতে প্রথমবার জনপ্রতিনিধি হন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা ৩০ বছর তিনি কাউন্সিলর ছিলেন। অনাস্থা এনে তিনবার রামপুরহাট পুরসভার চেয়ারম্যান এবং একবার ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে বীরভূম জেলা কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব পান। গত ২২ জানুয়ারি রামপুরহাটে আইন অমান্য কর্মসুচি সফল ভাবে পালন করেন। কিন্তু তারপরের দিনই তাঁকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরিবর্তে তাঁকে দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্য এবং আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ নতুন সভাপতি করা হয় সিউড়ির সঞ্জয় অধিকারীকে। জিম্মির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে প্রচার করেছেন।
এসবের পর দলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এই নেতা৷ জিম্মি বলেন, ‘জেলায় বিজেপির বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে বিপজ্জনকভাবে। তাই বিজেপিকে রুখতে আমি তৃণমূলে যোগদান করলাম। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নে সামিল হতেই আমার এই সিদ্ধান্ত।’ এদিন কংগ্রেসে যোগদানের পরেই রামপুরহাট-সহ জেলার অন্যান্য জায়গার দলীয় নেতারা তাঁকে শুভেচ্ছা জানান৷ দলের তরফে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, জিম্মির দলত্যাগ নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে বলে মনে করেন বর্তমান জেলা সভাপতি সঞ্জয় অধিকারী৷ তিনি বলেন, ‘দল তাঁকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছিল। লোকসভা ও বিধানসভার টিকিট দিয়েছিল। উনি পদলোভী। তাই ব্যক্তি স্বার্থে দল ত্যাগ করেছেন।’ তবে সৈয়দ সিরাজ জিম্মির মতো একজন দক্ষ সংগঠক এবং নেতার তৃণমূলে যোগদান বীরভূমে দলকে আরও অনেকটাই উজ্জীবিত করবে বলে নিশ্চিত স্থানীয় নেতৃত্ব৷
ছবি: সুশান্ত পাল
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.