ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছিল বামফ্রন্ট। এবার রাজ্যের ছ’টি আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করল কংগ্রেস। আর জি কর আবহে ভোটের ময়দানে দুই দলই এককভাবে শক্তিপরীক্ষায় নামছে। ফলে বাম-কংগ্রেস জোটের সলতে পেকেও পাকল না। আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর, সিপিএম বরাবরই জোটের পক্ষে। তবে প্রবল আপত্তি তোলে ফরওয়ার্ড ব্লক। মূলত, বাম শরিকদের আপত্তিতেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাস্তবায়িত হল না।
আর জি কর কাণ্ড নিয়ে উত্তাল গোটা রাজ্য। তারই মাঝে আগামী ১৩ নভেম্বর রাজ্যের ৬ কেন্দ্রে উপনির্বাচন। সেগুলি হচ্ছে–সিতাই, মাদারিহাট, নৈহাটি, তালড্যাংরা, হাড়োয়া ও মেদিনীপুর। মনে করা হচ্ছিল, ‘হাত-হাতুড়ি’ নতুন উদ্যোমে হারানো জমি উদ্ধারে নেমে পড়বে। যৌথভাবে শাসক তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ে নামবে তারা। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই উলটো। গতকাল. সোমবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বামেরা। আইএসএফকে ছেড়ে দেওয়া হয় হাড়োয়া আসনটি। আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর, সিপিএম বরাবরই জোটের পক্ষেই ছিল। প্রবল আপত্তি তোলে ফরওয়ার্ড ব্লক। মূলত, বাম শরিকদের আপত্তিতেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাস্তবায়িত হল না।
তারপরই আজ তালিকা প্রকাশ করে হাত শিবির। জানা যাচ্ছে, সিতাই থেকে লড়বেন হরিহর রায়সিংহ, বিজেপির গড় মাদারিহাটের টিকিট পেয়েছেন বিকাশ চাম্প্রমারি, নৈহাটিতে পরেশনাথ সরকার, তালড্যাংরা থেকে ময়দানে তুষারকান্তি সন্নিগ্রাহী, হাড়োয়ায় হাবিব রেজা চৌধুরী ও মেদিনীপুরে লড়ছেন শ্যামল কুমার ঘোষ। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, আর জি কর আবহে শক্তি যাচাই করতে চাইছে বামেরা। ‘দ্রোহ’ ভোটের মরা গাঙে জোয়ার আনে কি না, ২০২৬-এর আগে সেটাই দেখতে চাইছে তারা।
এদিকে সূত্রের খবর, জোটের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে সূক্ষ্ম অনুঘটকের ভূমিকা নিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী। সেই সূত্রেই অধীর-ঘনিষ্ঠ জোটপন্থী সিপিএম নেতৃত্বের মধ্যে আচমকাই এ নিয়ে ঝাড়খণ্ডে ভোটের প্রেক্ষিতে চর্চা শুরু হয়। ফলে, সাময়িকভাবে হলেও বাম ও কংগ্রেস দুই শিবিরের মধ্যেই জোটের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। জানা যাচ্ছে, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন আরেক প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। দুই শিবির যখন নিজেদের মতো প্রার্থী নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত, তখন সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রদেশ কংগ্রেসের জোটপন্থী শিবির দিল্লিতে হাইকমান্ডের কাছে বার্তা পাঠায়। সঙ্গে অধীরের কাছেও সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের আরেকটি তরফে বার্তা যায়। উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে দুই শিবির জোট করে লড়ছে।
সূত্রের খবর, সেই দৃষ্টান্ত দেখিয়ে বাংলাতেও বাম-কংগ্রেস জোট করা যায় কি না, অধীর পরোক্ষে সেই বার্তা দেন এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপালকে। এর পরই প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে এআইসিসি নেতৃত্বের যোগাযোগ এবং জোটচর্চা শুরু। তারই ফাঁকে জেলা নেতৃত্বের দাবিও জানিয়ে রাখা হয় এআইসিসিকে। তবে সেই দাবি ধোপে টিকত, যদি না ফরওয়ার্ড ব্লক আর আরএসপি নেতৃত্ব ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর উপর চাপ তৈরি করতেন। নতুন করে জোটচর্চা শুরুর পর কংগ্রেস উত্তরবঙ্গের যে কোনও আসন সিপিএমের কাছে দাবি করে। কিন্তু বিমানবাবু জানিয়ে দেন, ফরওয়ার্ড ব্লক তাদের দাবি ছাড়বে না। এখানেই ইতি জোটচর্চায়। তবে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে যাতে এই জটিল পরিস্থিতি আর না তৈরি হয়, জোট যাতে আগে থেকেই ফলপ্রসূ হয় তা নিয়ে আগেই এক দফা আলোচনা বিমানবাবুর সঙ্গে ইতিমধ্যে সেরে নিয়েছেন প্রদীপবাবু।
এপ্রসঙ্গে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, “শুভঙ্করবাবু দীর্ঘদিন সিপিএম বিরোধী আন্দোলন দেখেছেন। তিনি প্রথমেই সিপিএমের বন্ধু হিসাবে চিহ্নিত হয়ে যাবেন নাকি একা দলকে মানুষের কাছে নিয়ে যাবেন, সেটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যাপার।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.