ছবি: প্রতীকী।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কখনও বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা। আবার কখনও শাসক দলের তৃণমূল নেতাদের নাম করে নিজের ‘ওয়েট’ বাড়ানো। এভাবেই নিজেকে প্রভাবশালী হিসাবে তুলে ধরেছিলেন পুরুলিয়া শহরের এক মহিলা। চৌখস কথাবার্তার আড়ালে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার জাল বিছিয়েছিলেন তিনি। গ্রুপ ডি পদে স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, প্যারা টিচার, সিভিক ভলান্টিয়ার, জুনিয়র কনস্টেবল এমন কি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরেও চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করেছিলেন ওই মহিলা।
কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। পুলিশের জালে ধরা পড়ে গেলেন পুরুলিয়ার বর্ণালী দত্ত ওরফে প্রিয়াঙ্কা দত্ত। ওই মহিলা বেআইনি জমির কারবারেও যুক্ত বলে অভিযোগ। এনিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের বাড়ি পুরুলিয়ার সাহেব বাঁধ এলাকায়। সোমবার রাতে বাড়ি থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশ। একইসঙ্গে ধৃত মহিলার সঙ্গী জয়পুরের বিকাশ মুখোপাধ্যায়কেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদেরকে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে বর্ণালী ও বিকাশ দুজনের ১০ দিন পুলিশ হেফাজত হয়। এই চাকরির প্রতারণা চক্র কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত সেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।” জানা গিয়েছে, এই প্রতারণার জাল বিছোতে জেলার স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য হয়েছিলেন ধৃত বর্ণালী। প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণের নাম করে স্বাস্থ্য দপ্তরে চাকরি দেওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েছিলেন। যাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল তাদের নামে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে ফেক আইডিও ছাপানো হয়েছিল। যে আইডিতে লেখা ছিল, পুরুলিয়া মেডিকেল কলেজ ট্রেনিং সেন্টার। মেডিকেল ট্রেনিং, ফার্স্ট এইড।
পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, সরকারি কর্মী এমনকি নানান অজুহাতে আমলাদের সঙ্গে আলাপ করে চাকরি দেওয়ার এই প্রতারণার কাজ করতেন বর্ণালী। যাতে মহিলার ওই কাজকর্ম দেখে তাঁর প্রতি বিশ্বাস হয় চাকরিপ্রার্থীদের। এছাড়া বিভিন্ন দপ্তরে তাঁদের একটি করে লোক থাকত। প্রার্থীদেরকে ওই দপ্তরে ডেকে ওই লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে আস্থা অর্জন করে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে নিতেন ওই মহিলা। চলতি বছরের ২ মার্চ এই মর্মে পুরুলিয়া সদর থানায় অভিযোগ করেন বলরামপুরে রূপকাটা গ্রামের বাসিন্দা অনিরুদ্ধ গড়াই। জুনিয়র কনস্টেবলে চাকরির টোপ দিয়ে তাঁর কাছ থেকে ২ লাখ ১৪ হাজার টাকা নেয় বলে অভিযোগ।
এছাড়া শিশির রায় নামে পুরুলিয়া সদর থানাতেও আরেকজন অভিযোগ করেন। তাঁর দুই ভাগ্নেকে স্বাস্থ্য দপ্তরে গ্রুপ ডি চাকরি দেওয়ার নাম করে ওই মহিলা টাকা নেয় বলে অভিযোগ। এই মহিলা আগে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জেলা রাজনৈতিক মহল সূত্রে জানা গিয়েছে। পরবর্তীকালে ২০১১ সাল নাগাদ তৃণমূলে যোগ দেন। মহিলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকও হয়ে যান। পরবর্তীকালে তাঁকে মহিলা তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করে দল। পুরুলিয়া জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী সুমিতা সিং মল্ল বলেন, “ওই মহিলার নানান বেনিয়মের খবর পেয়ে আমরা বহুদিন আগেই তাঁকে বহিষ্কার করেছিলাম। তার সঙ্গে বর্তমানে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.