চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো এক সামাজিক ব্যাধি। এই বার্তা দিতে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা অসহায় বাবার অভিনয় করে বিপাকে পড়লেন বার্নপুরের বাসিন্দা এক অভিনেতা তথা সমাজকর্মী। সমাজকর্মী সনৎ বক্সীর নামে অভিযোগ দায়ের হল থানায়। অভিযোগ করলেন এক ডাক্তার দম্পতি।
জানা গিয়েছে, অভিনয়ের মধ্যে উল্লেখ ছিল দুর্গাপুরের (Durgapur) বাসিন্দা চিকিৎসক এক দম্পতির কথা। তাঁরা থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হচ্ছিল তাঁদের বাবাকে। সেই বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করেন সনৎবাবু। ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। বৃদ্ধকে সমাবেদনা জানাতে সমাজকর্মীরা ছুটে যান বার্নপুরের প্রান্তিক বৃদ্ধাশ্রমে। আবার দুর্গাপুর থেকে গিয়ে কয়েকজন গিয়ে শাসিয়েও আসেন বৃদ্ধাশ্রমের কর্মীদের। মঙ্গলবার পুলিশও পৌঁছে যায় সেখানে। গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায় বার্নপুর ঢাকেশ্বরী বৃদ্ধাশ্রম এলাকায়।
কাকতলীয়ভাবে দুর্গাপুরের এক ডাক্তার দম্পতির খোঁজ মেলে। ভিডিওটির সঙ্গে দুর্গাপুরের বাসিন্দারা ওই দম্পতিকে সকলে গুলিয়ে ফেলতেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। এরপরই ওই চিকিৎসক দম্পতি সাইবার সেলে অভিযোগ দায়ের করেন। সমস্যায় পড়েন সনৎবাবু। তাঁর কথায়, “আমি অভিনয় করেছি মাত্র। স্ক্রিপ্টে কারও নাম নিইনি। আমার ফেসবুকে সার্চ করলে দেখতে পাবেন আমি বিভিন্ন কাল্পনিক চরিত্র অভিনয় করে ফেসবুকে পোস্ট করি ও সামাজিক বার্তা দিয়ে থাকি। এই ভিডিওতেও স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে এটি একটি অভিনয়। সেখানে মেকআপ আর্টিস্ট ও ক্যামেরাম্যানের নামও রয়েছে। ভিডিওর কমেন্টে কেউ হয়তো ওই ডাক্তার দম্পতির নাম লিখে দিয়েছেন। তা আমার জানার কথা নয়।” এবিষয়ে বৃদ্ধাশ্রমের দায়িত্বে থাকা অর্চনা ঘোষ বলেন, “মঙ্গলবার পুলিশ এসেছিল বৃদ্ধাশ্রমে। বিভিন্ন খোঁজ খবর নিয়ে যান। সনৎবাবু প্রায়ই আসেন বৃদ্ধা-বৃদ্ধাদের চিকিৎসা পরিষবা দিতে। লকডাউনে রিলিফের ব্যবস্থা করতে। তিনি আবাসিকদের বিনোদন দিতে নাচ-গান-অভিনয়ও করেন। তবে আমাদের কোনও অনুমতি না নিয়েই এদিন তিনি শুট করেছেন।” আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের এসিপি ডিডি ও সাইবার সৌমদ্বীপ ভট্টাচার্য্য বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। কোনও এফআইআর না হলেও তদন্ত শুরু হয়েছে। ভিডিওটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সনৎবাবুকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।”
উল্লেখ্য, সনৎ বক্সী বার্নপুরের বাসিন্দা, একজন সমাজকর্মী ও যোগ ব্যায়ামের ট্রেনার। তিনি প্রান্তিক বৃদ্ধাশ্রমের বারান্দায় বসে এক বৃদ্ধ আবাসিকের অভিনয় করে ভিডিও তৈরি করেছিলেন। কাল্পনিক ওই স্ক্রিপটেড ভিডিওতে বলেছিলেন, “আমার নাম সনৎ বক্সী। আমি বিমা সংস্থায় কাজ করতাম। ছেলে সার্জেন ও বৌমা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। ২ জনই দুর্গাপুরের নামকরা ডাক্তার। বৌমার অত্যাচারে আমি ও আমার স্ত্রী এই বৃদ্ধাশ্রমে চলে আসি। স্ত্রী ছ’মাস আগে মারা গিয়েছেন। এই বৃদ্ধাশ্রমে আমি একা থাকলেও ছেলে বৌমা আমার খবর নেয় না”।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.