সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ধর্ম নিয়ে কত কী-ই না ঘটছে। দেশজুড়েই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণটাই বিপন্নের মুখে। আজ সেখানে বর্ধমানের এক গাঁয়ে গত বিশ বছর ধরে সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ে উঠেছে। আলির বাড়িতে পূজিত হচ্ছেন কালী। রয়েছেন মনসাও। ধূমধাম করে প্রতি বছর চৈত্রমাসের কালীর আরাধনা হয়ে আসছে। হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই আমন্ত্রিত সেখানে। পুজো উপলক্ষে তাঁদের খাওয়ানোও হয় আলির বাড়িতে।
পূর্ব বর্ধমানের মেমারির মামুদপুর গ্রামে বাড়ি মুর্শেদ আলির। পেশায় রাজমিস্ত্রি। আর তাঁর বাড়িতেই দুই দশক ধরে পূজিত হচ্ছে কালী। বাড়িতেই রয়েছে মন্দির। ঘটা করে পূজা হয়। অন্নকূটের ব্যবস্থা করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সেখানেই গিয়ে দেখা যায় জাঁকজমক করেই আরাধনা চলছে মা কালীর। গ্রামের সব সম্প্রদায়ের মানুষ সেখানে হাজির। হরিনাম সংকীর্তনের আসর বসেছে বাড়িতে। কেন এমন আয়োজন?
এর পিছনে একটা বড় ঘটনার কথা শোনালেন মুর্শেদ। জানালেন, রাজমিস্ত্রি বাবার হাত ধরে ছোট মেলায় এই গ্রামে আসেন। তার পর পাকাপাকিভাবে এখানেই বসবাস শুরু করেন তাঁরা। তরুণ বয়সে গলসির কুলগড়িয়া চটির সন্ধ্যা সিংহের সঙ্গে প্রণয়ে আবদ্ধ হন। বিয়েও করেন। সন্ধ্যা সিং পরিচিত হন সন্ধ্যা আলি নামে। তাঁদের বাড়িতে একটি বেলগাছ ছিল। সন্ধ্যা সেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সেখানে ধূপ জ্বালাতেন তিনি। একদিন সেই বেলগাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেন মুর্শেদ। কিন্তু সন্ধ্যা আপত্তি করেন। স্ত্রীর কথা শোনেন মুর্শেদ। এরপরই একদিন রাতে কালী না কি মুর্শেদকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে পুজো করতে বলেন। স্ত্রীকে সেই কথা জানান। তারপরই চৈত্রমাসের অমাবস্যা তিথিতে বাড়িতে শুরু হয় কালীর আরাধনা। বিশ বছরে যার বিরতি ঘটেনি। গ্রামবাসীরা জানান, এরপরই মুর্শেদের পরিবারে সমৃদ্ধিও ঘটেছে।
ধর্ম নিয়ে চারিদিকে অনেক হানাহানির কথা শোনা গেলেও মুর্শেদের পরিবারে বা গ্রামে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। আসেপাশের গ্রামের বিভিন্ন ধর্মের মানুষও আসেন আলির বাড়ির কালীপুজোয়। স্থানীয় বাসিন্দা সরিৎ ঘোষ, সন্দীপন সরকাররা জানান, সম্প্রীতির নজির গড়েছেন মুর্শেদ ভাই। সকলেই আসেন পুজোয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.