রাহুল রায়, বসিরহাট: ভাতের উপরে চিকেনের লেগ পিস আর ডিম। আরেক প্লেটে মুরগির ঝোল। খেতে খেতে সোনেরাম হেমব্রম, কিষাণ হেমব্রম, সুদীপ্ত সোরেন, বিক্রম সোরেন, শিবু মান্ডিরা বলে উঠল, এমন হলুদ ভাত ওরা কোনওদিন খায়নি। হ্যাঁ, চিকেন বিরিয়ানি তাদের কাছে অন্যরকম ভাতই। কারণ এই সমস্ত পরিবারহীন শিশুরা এবার পুজোয় প্রথমবার বিরিয়ানির স্বাদ পেল। অনাথ আশ্রমের এই কচিকাঁচাদের জন্য ষষ্ঠীর দিন এক মানবিক উদ্যোগ নিয়েছিল বসিরহাট কলেজের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী।
শহর বসিরহাটের দু’টি অনাথ আশ্রম রয়েছে। সেখানে ৬০ জন অনাথ শিশু থাকে। যাদের বয়স ৬ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। এদেন মধ্যে অবশ্য কারও-কারও বাবা কিংবা মা রয়েছেন। কিন্তু ছেলেকে একবেলা খাওয়ানোরও সামর্থ তাঁদের নেই। তাই সন্তানদের ঠাঁই হয়েছে আনন্দ আশ্রমে। তাই তাদের কাছে পুজোর পাঁচটা দিনও বছরের বাকি দিনের মতোই। এই গ্রামে-শহরে আলোর বেণু বাজলেও সেই আলো ওই ৬০ জনের কাছে অধরাই থেকে যায়। তবে এবারের পুজোটা একটু অন্যরকম।
অন্যান্যবারের পুজোটা আশ্রমের চার দেওয়ালের মধ্যেই কেটে যেত ওদের। দুর্গাপুজোয় বাইরে বেরিয়ে আনন্দ করা কাকে বলে, সেটাও এতদিন তারা জানত না। এবার তাদেরও পুজোয় শামিল করল বসিরহাট কলেজের পড়ুয়ারা। পুজোর কয়েকদিন আগে ওই আশ্রমের শিশুদের নতুন পোশাক দিতে গিয়েছিলেন বসিরহাট কলেজের সায়ন বিশ্বাস, অভিষেক মজুমদাররা। পোশাক দিতে গিয়ে ওই কচিকাঁচাদের মুখে তাদের পুজো কাটানোর কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল সায়ন-অভিষেকদের। সেদিনই তাঁরা কথা দিয়েছিলেন, এবার অন্যভাবে কাটবে ওই ৬০ খুদের পুজো।
অনাথ আশ্রমের বাসিন্দাদের পুজো দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন কলেজ পড়ুয়ারা। যেমন কথা তেমন কাজ। ষষ্ঠীর দিন বিরিয়ানি দিয়ে পেটপুজো সেরে ঠাকুর দেখল ওই ৬০ জন। বিষয়টির অন্যতম উদ্যোক্তা সায়ন বলেন, “জামা প্যান্ট দেওয়ার দিন ছেলেগুলো জানায়, তারা দূর থেকে আলোর ছটা দেখতে পায়। কিন্তু ঠাকুর কোনওদিন দেখেনি। এর পরেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই ওদের ঠাকুর দেখাব। রাতের খাবার খাওয়াব।” সেই কথা রাখলেন অভিষেক-সায়নরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.