সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: ক্যানসার রোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের সাধের বিনুনি কেটে ফেললেন এক কলেজ ছাত্রী। বাড়ির অমত সত্ত্বেও নিজে হাতে কেটে ফেললেন ১৪ ইঞ্চি চুল। ডায়মন্ড হারবার কলেজের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর এহেন পদক্ষেপ এখন বন্ধুমহলে তো বটেই, সমাজের নানা স্তরে প্রশংসিত।
ডায়মন্ড হারবার এফসি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ইংরেজি অনার্সের ছাত্রী অর্পিতা ভাণ্ডারি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির শ্যামবসুর চকের বাসিন্দা ওই ছাত্রী। নিজের হাতে কেটে ফেলেছেন তাঁর কালো কুচকুচে সুদীর্ঘ কেশরাশি। একদিন যে চুলের জন্য গর্ব ছিল তাঁর। ক্যানসার রোগীদের জন্য সেই চুল দান করতে একবারও ভাবেননি অর্পিতা।
আসলে কেমোথেরাপি চলাকালীন মাথার সমস্ত চুল উঠে যায় ক্যানসার রোগীদের। একে তখন রোগীর শরীরে বাসা বেঁধে থাকে মারণ রোগ, অন্যদিকে চুল হারিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন তাঁরা। মহিলা ক্যানসার রোগীদের সেই হীনমন্যতা থেকে উদ্ধারে এগিয়ে এলেন তরুণী ছাত্রী। ‘কোপ উইথ ক্যানসার’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ‘মদত ট্রাস্ট’ কেমোথেরাপি চলাকালীন মুম্বই, ভেলোর ও অন্যান্য ক্যানসার হাসপাতালগুলিতে রোগীদের বিনামূল্যে উইগ প্রদান করে থাকে। একটি উইগ তৈরিতে কম করে ছয় থেকে সাত জন মহিলার চুলের প্রয়োজন হয়। চুল দান করতে হলে একজন মহিলাকে কমপক্ষে ১২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের চুল দান করতে হবে। তাছাড়াও রয়েছে বেশকিছু নিয়মকানুন।
অর্পিতা জানান, “বছরখানেক আগে সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই জানতে পারি, ক্যানসার আক্রান্ত মহিলারা কেমোথেরাপি চলাকালীন কীভাবে হীনমন্যতায় ভোগেন! তখনই নিজের চুল দান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। একবছর ধরে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমস্ত নিয়মকানুন মেনে চুল দান করব বলেই চুলের যত্ন নিয়েছি। শেষপর্যন্ত গত মাসেই নিজের হাতে প্রায় ১৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের চুল কেটে ক্যুরিয়ারে পাঠিয়েছি ওই সংস্থার কাছে।” ছাত্রী জানান, বাড়ির অমতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নিজের কাছে টাকা ছিল না। তাই তিনি কোনও ভাল সালোঁ বা বিউটি পার্লারে যেতে পারেননি। তাই মাপজোকের বিষয়ে বেশ খানিকটা ঝুঁকি নিয়েই তাঁকে নিজের হাতেই কাটতে হয়েছে সাধের কেশরাশি।
ক্যানসার রোগীদের কথা ভেবে অর্পিতার এই দান গ্রহণ করেছে ওই সংস্থা। শংসাপত্র পাঠিয়েছে অর্পিতাকে। নিজেদের ঘরের মেয়ের এমন সিদ্ধান্তের কথা ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছেন অর্পিতার অভিভাবকরাও। মেয়ের গর্বে গর্বিত আজ তাঁরাও। অর্পিতা বন্ধুমহলেও আজ এক দৃষ্টান্ত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.