Advertisement
Advertisement

বিশ্ব দরবারে উজ্জ্বল মুখ্যমন্ত্রীর ‘ব্র্যান্ড বেঙ্গল’

ঐতিহাসিক মুহূর্তের আমরা সাক্ষী হতে পেরেছি৷ না এলে সত্যিই মিস করতাম৷

CM Mamata's Brand Bengal is Bright In Vatican too
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:September 5, 2016 9:23 am
  • Updated:September 5, 2016 9:23 am  

কিংশুক প্রামাণিক, ভ্যাটিকান সিটি: ‘আগুনের পরশমণি’ গানটি মাদার টেরিজার খুব প্রিয় ছিল৷  ‘টিম বেঙ্গল’কে নিয়ে সেই গান গাইতে গাইতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেঁটে পৌঁছলেন ভ্যাটিকানে৷ ঠিক  ব্যাসিলিকার সামনে এসে থমকে দাঁড়াল এসকর্ট করে আসা পোপের রাষ্ট্রের কম্যান্ডোরা৷ সঙ্গে পোস্টার বুকে আঁটা আমরা সকলে৷ এই পর্যন্ত আসার পর তাঁরা ভাবছিলেন, মাদার টেরিজার কর্মভূমি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে কোন দিকে নিয়ে যাবেন৷ পিছনে সেণ্ট পিটার্স স্কোয়ারে তখন লক্ষ লক্ষ মানুষ৷ সামনের সোজা পথটুকু পেরলেই মূল চাতাল৷ ওখানেই পোপের আসন৷ ডানদিকে বসবেন ফাদাররা৷ বাঁদিকে বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ৷ আরও পিছন দিকে অন্য অতিথিরা৷

ওখানেই মিনিট চারেক অপেক্ষা৷ হঠাৎই দেখা গেল হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছেন মিশনারিজ অফ চ্যারিটির প্রধান সিস্টার প্রেমা৷ কোনও কথা না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁ হাতটা চেপে ধরলেন তিনি৷ তারপর একেবারে টানতে টানতে সোজা ব্যাসিলিকার সামনে৷ বসালেন একেবারে নিজের পাশের চেয়ারে৷ অত বড় সম্মান ও আন্তরিকতা পেয়ে চোখ চিক চিক করে উঠছিল মমতার৷ ভ্যাটিকান সিটির এই অনুষ্ঠানে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল-সহ অনেকেই এসেছেন৷ কিন্তু সবার নজর একজনের দিকে৷ যিনি মাদার টেরিজার শহর কলকাতার প্রতিনিধি৷

Advertisement

 14224851_1174953559238650_7242549011527022928_n (1)বিরাট সম্মান পেয়ে তাই আবেগে ভেসে গেলেন মমতা৷ এবং মনে করিয়ে দিলেন, শুধু মাদার টেরিজার শহর কলকাতার মানুষ তিনি  নন, মাদার যেভাবে তৃণমূলস্তরের অসহায় মানুষের জন্য কাজ করছেন, তিনিও তেমনই গরিব মানুষের জন্য কাজ করেন৷ এদিন অনুষ্ঠানের পর মুগ্ধ মমতা বলেন,  “ভ্যাটিকান হল ইতিহাসের মাটি৷ ঐতিহাসিক মুহূর্তের আমরা সাক্ষী হতে পেরেছি৷ না এলে সত্যিই মিস করতাম৷ যে সম্মান পেয়েছি, আমার সঙ্গে আসা টিম বেঙ্গল পেয়েছে, তাতে আমরা অভিভূত৷ এখানে হয়তো অনেকেই এসেছেন৷ কিন্তু আমাদের জন্য যে ব্যবস্থা আলাদা করে করা হয়েছে তা গর্বের৷ সিস্টার প্রেমা নিজে আমায় রিসিভ করেছেন৷” মমতা আরও বলেন, “খুব খুব গর্ব হচ্ছিল বারবার বাংলা ও কলকাতার নাম উচ্চারিত হচ্ছে দেখে৷ বাংলায় কথাও বলা হল৷ বাংলা যে বিশ্বসেরা হবে সেটা আজ বোঝা গিয়েছে৷ আমি নিজের জন্য আসিনি৷ এসেছিলাম বাংলা ও ভারতের বার্তা নিয়ে৷ মাদার তৃণমূলস্তরের মানুষের কাজ করতেন, আমরাও সেই কাজ করি৷”

পুরনো স্মৃতি উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী এরপর বলেন, “আমি তো মাদারকে চিনতাম, মাদারও আমায় চিনতেন৷ কলকাতায়  দাঙ্গার সময় মাদারের সঙ্গে একদিন পাঁচ মিনিটের জন্য দেখা হয়েছিল৷ শিয়ালদহের লরেটো চার্চে রিলিফ নিয়ে গিয়েছিলাম৷ দেখি উনিও গিয়েছেন৷ আমি বললাম, আপনি কেন পথে৷ উনি বললেন, আপনি কেন পথে৷ আমি বললাম, সাধারণ মানুষ বিপদে পড়েছে৷ ওদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব৷ মাদার বলেছিলেন, আমাদের সবার দায়িত্ব৷ সত্যি মাদারকে নিয়ে বইটি পড়তে পড়তে আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল৷”

ছিলেন ঊষা উত্থুপও৷ কপালে ‘ক’ লেখা তাঁর সেই বিখ্যাত টিপ পরে তিনিও এদিন গান গাইলেন ভ্যাটিকানের পথে৷ তাঁর গান শুনতেও একসময় ভিড় জমে যায় রোমের রাস্তায়৷ মাদার টেরিজার কর্মকাণ্ড কলকাতায়, বাংলায়৷ ফলে এই দিনটি যে তাঁর কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তা আগেই জানিয়ে রোমে আসেন মমতা৷ গতকাল রাতেই ঠিক করেন বাংলার প্রতিনিধিদলকে আলাদা করে চিনিয়ে দেবেন ভ্যাটিকানে আসা মানুষের সামনে৷ এখানে মমতার সঙ্গী মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, দুই সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও ব্রায়েন৷ তাঁদের সঙ্গে সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের নিয়েই মমতা তৈরি করেন ‘টিম বেঙ্গল’৷ শনিবার রাতে রীতিমতো গানের রিহার্সাল হয় হোটেলের লবিতে৷ Mamata_webতাতে বেছে নেওয়া হয় এমন সব গান যেগুলি মাদার পছন্দ করতেন, নতুন অনুষ্ঠানের সঙ্গে মানানসই৷ সকালে একেবারে হোটেল থেকে বুকে ‘টিম বেঙ্গল’ পোস্টার এঁটে সবাই বেরিয়ে পড়েন ভ্যাটিকানের উদ্দেশে৷ মাদারের শাড়ির রেপ্লিকা দিয়ে পোস্টার৷ মুখ্যমন্ত্রী নিজে পরেন নীল-সাদা শাড়ি৷ অন্যরাও কমবেশি নীল-সাদা৷ ‘আগুনের পরশমণি, মঙ্গলদীপ জ্বেলে, প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’ গাইতে গাইতে রোমের পথে মমতার ‘টিম বেঙ্গল’৷ তিনি যাবেন বলে রাস্তা একেবারে পরিষ্কার করে রাখেন ভ্যাটিকানের রক্ষীরা৷ সাধারণ মানুষ অবাক হয়ে দেখে বাংলা গান গাইতে গাইতে এগিয়ে আসছে একটি দল৷ মঞ্চে টানা তিন ঘণ্টা বসে অনুষ্ঠান দেখে মুখ্যমন্ত্রী৷ ফেরার পথে জনতার ভিড়ে আটকে পড়েন৷ সেই সময়ই দেখেন হুইল চেয়ারে এক অসুস্থ মহিলা৷ তাঁর মুখের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করছেন স্বামী৷ মমতা এগিয়ে যান৷ হাওয়া করতে শুরু করেন৷ জলের বোতল এগিয়ে দেন৷ উৎকণ্ঠা তখন তাঁর চোখে মুখে৷ অ্যাম্বুল্যান্সকে খবর দিতে বলেন ভ্যাটিকানের রক্ষীদের৷ একটু পরে মহিলা সুস্থ বোধ করতেই খুশি মমতা এগিয়ে যান৷ কথায় বলে, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’৷ শুধু তাই নয়, ভ্যাটিকানে এসেও ‘দিদি দিদি’ ডাক তাঁকে শুনতে হল৷

তবে একটি কথা বলতেই হবে, মাদারের ঈশ্বরত্ব প্রাপ্তিতে বাংলাকে বিশ্ব দরবারে ভাল করেই প্রতিষ্ঠা করে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আবার বোঝালেন, অন্যদের চেয়ে তিনি কোথায় আলাদা৷

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement