সৌরভ মাজি: বর্ধমান জংশন স্টেশনের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্টেশনের নতুন নাম হবে ‘বটুকেশ্বর দত্ত জংশন’। তেমনই দাবি করেছেন প্রয়াত বিপ্লবীর কন্যা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া কী কোনও স্টেশনের নাম পরিবর্তন করা যায়? প্রশ্ন তুলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোরপাধ্যায়ই। সোমবার নবান্নে তিনি বলেন, ‘দু’বার রেলমন্ত্রী ছিলাম। যতদূর জানি, স্টেশনের নাম বদল করতে হলে রাজ্যের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। আমাকে কিছু জানানো হয়নি।’ এমনকী, বর্ধমান স্টেশনে নাম বদল হবে, এমন কোনও নির্দেশ বা সিদ্ধান্তের কথা এখনও পর্যন্ত জানানো হয়নি রেলের তরফেও।
১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল। দিল্লিতে সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি বা সংসদে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন বিপ্লবী ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত। ফাঁসি কাঠে প্রাণ দিতে হয়েছিল ভগৎ সিংকে। আর বটুকেশ্বর দত্তকে আন্দামানের সেলুলার জেলে দীপান্তরে পাঠিয়েছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। ইতিহাসবিদদের মতে, বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত বর্ধমানের ভূমিপুত্র। ১৯১০ সালে ১৮ নভেম্বর অবিভক্ত বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ ব্লকের ওঁয়াড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু বাবার চাকরি সুবাদে অল্প বয়সেই কানপুরে চলে যান বটুকেশ্বর। স্কুল ও কলেজের পাঠ শেষ করে, বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের জড়িয়ে পড়েন। ১৯২৪ সালে কানপুরে ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদের মতো বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন বাংলার বটুকেশ্বর দত্ত। ১৯২৯ সালে সংসদে বোমা বিস্ফোরণে ফের বর্ধমানে পৈতৃক বাড়িতে চলে আসেন তিনি। খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে ভগৎ সিংয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন আত্মগোপন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৬৫ সালে দিল্লিতে মারা যান এই মহান বিপ্লবী। কিন্তু দেশের জন্য গোটা জীবন উৎসর্গ করলেও, বটুকেশ্বর দত্ত তেমন কোনও স্বীকৃতি পাননি বলে জানা গিয়েছে।
এখনকার পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষে ওঁয়াড়ি গ্রামে বিপ্লবীর পৈতৃক বাড়িটি রাজ্য সরকারকে দান করেছেন বটুকেশ্বর দত্তের কন্যা ভারতী দত্ত বাগচী। তাঁর দাবি, গত শনিবার পাটনায় তাঁর প্রয়াণদিবসের অনুষ্ঠানে ‘বর্ধমান জংশন’ স্টেশনের নাম ‘বটুকেশ্বর দত্ত জংশন’ করার কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। খবর এসে পৌঁছেছে বর্ধমানেও। রেলের তরফে অবশ্য সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। এদিকে বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তন নিয়ে জোর জল্পনা চলছে। কেউ বলছেন বিপ্লবীকে তাঁর যোগ্য সম্মান জানানো হল। আবার কারও মতে, বর্ধমান নামের গরিমাও কম নয়। স্টেশনের নাম পরিবর্তনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সম্পাদক মধুসূদন চন্দ্র বলেন, “সেই ২০১২ সাল থেকে আমরা বর্ধমান জংশন স্টেশনকে বিপ্লবীর নামে করার দাবি জানাচ্ছি। এতদিনে তার স্বীকৃতি পেলাম। মহান বিপ্লবীর নামে এই স্টেশন হবে এর থেকে খুশির খবর আর কী হতে পারে। দীর্ঘ লড়াইয়ে জয় পেলাম আমরা।” তবে বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তন হবে, এমন কোনও খবর তাঁর কাছে নেই বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী ও জেলার বিধায়ক স্বপন দেবনাথ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.