ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: সামনে ঢালের মতো একটা স্তর রয়েছে শুধু। দেখলে মনে হবে ম্যানগ্রোভের অরণ্য যেমন ছিল তেমনই আছে। কিন্তু আচমকাই পিছন থেকে কিছু কিছু জায়গা কেমন যেন ফাঁকা। একটু কাছে গেলেই বোঝা যাচ্ছে পিছনের দিক থেকে বন ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে। সে জায়গায় তৈরি হচ্ছে চিংড়ি চাষের ভেড়ি। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলীয় এলাকার ম্যানগ্রোভের (Mangrove) এ দশা সাম্প্রতিককালেই নজরে এসেছে। যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ বনদপ্তরের। আজ, মঙ্গলবার হিঙ্গলগঞ্জ (Hingalganj) সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে বৃক্ষপুজো করার কথা তাঁর। প্রকৃতি সংরক্ষণের বার্তা দিতে এই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর নির্দেশে তৈরি ম্যানগ্রোভের এই দশা দেখে হতাশ সকলে।
সাম্প্রতিককালের এই অরণ্য নিজে থেকে গজিয়ে ওঠেনি। সাইক্লোন ঠেকাতে এই বন তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। বছর দুই পেরিয়ে তাদের এখন বাড়ন্ত বয়স। সেই অবস্থাতেই এমন মারাত্মক অভিযোগ সামনে এসেছে ওই দুই জেলার একটা বড় অংশজুড়ে। যাকে সামনে রেখে রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তার কাছে অভিযোগ জানিয়েছে বনদপ্তর। তাদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কড়া পদক্ষেপের কথা জানিয়ে নির্দেশিকাও জারি হয়েছে। সূত্রের খবর, পরিস্থিতি সরেজমিন করতে যে কোনও দিন এলাকায় যেতে পারেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘ম্যানগ্রোভে কোপ বেআইনি। সেই অরণ্যে পরীক্ষা করেই এমন বেআইনি কাজ নজরে এসেছে। কড়া পদক্ষেপ ছাড়া এই কাজ রোখা যাবে না।’’
দুই ২৪ পরগনা, সুন্দরবন-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অংশের ঝড়-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি থেকে বিপদ আঁচ করেই আমফান (Amphan) ঝড়ের পর পর উপকূল এলাকায় ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ বসাতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বনদপ্তর জানায়, শেষ পর্যন্ত ১৫ কোটি ৫৪ লক্ষ চারা বসানো হয়েছিল। কাজ কেমন হয়েছে তা দেখতে মাঝেমাঝেই এলাকা নিরীক্ষণ চলে। প্রথম বছর দেড়েক কোনও অভিযোগ আসেনি। এই মুহূর্তে সেই ম্যানগ্রোভ চারা উচ্চতায় বেড়ে তিন ফুটের বেশি হয়েছে। আরও একটি মরশুম কাটিয়ে ফেলতে পারলে ঝড় ঠেকানোর সাহস এই গাছগুলি দেখাতে পারবে বলে মনে করছে বনদপ্তর।
এ জিনিস নতুন নয়। এর আগেও অভিযোগ মিলেছে, সাগর, গোসাবা, নামখানার মতো বেশ কিছু এলাকায় এর মধ্যেই বেআইনিভাবে এই ম্যানগ্রোভ অরণ্য কাটার কাজ হয়েছে বলে। বিস্তারিত রিপোর্ট এসেছে বনদপ্তরেও। শুধু তাই নয়, সুন্দরবন-সহ সাগরের বেণুবন এলাকার প্রায় ৩০০ একর জমিকে এভাবে একেবারে নেড়া করে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ। জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট এক আধিকারিক এ নিয়ে পদক্ষেপ করতে গিয়ে অন্যত্র বদলি হয়ে গিয়েছেন।
দপ্তরের অন্যতম এক উচ্চপদস্থ কর্তা এক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনেরই একটি অংশের দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রশাসনের কোথাও কোনও অংশের যোগসাজশ না থাকলে এতটা সাহস দেখানো সম্ভব নয়। সেই জায়গাটাই ধরার চেষ্টা চলছে।’’ বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ স্তরে পদক্ষেপ করতে বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাতের অন্ধকারে ম্যানগ্রোভ অরণ্যে কোপ পড়ছে। রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে বিষয়টি জানানো হয়েছে। শেষ দেখে ছাড়ব।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.