স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা ও নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুর: হাতে আছে দুই৷ কান্দি আর মুর্শিদাবাদ পুরসভা৷ তাও নাকি হাতছাড়া হতে চলেছে৷ এই পরিস্থিতিতে আজ মুর্শিদাবাদে পৌঁছচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মঙ্গলবার তাঁর প্রশাসনিক বৈঠকের আগে প্রবল চাপের মুখে কার্যত ‘প্রলাপ’ বকতে শুরু করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি৷ একদা নিজের গড় মুর্শিদাবাদে তাঁর যে আর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, তা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর রাজনৈতিক বক্তব্যের বাইরে গিয়ে দলত্যাগী কংগ্রেস জনপ্রতিনিধিদের আক্রমণ করলেন তিনি৷ সেইসঙ্গে রবিবার দক্ষিণ কলকাতার উত্তম মঞ্চে কংগ্রেসের রাজনৈতিক কর্মশালা থেকে অধীর স্বীকার করে নিলেন, বিধানসভা ভোটে জেতার শক্তিই কংগ্রেসের ছিল না৷
মঙ্গলবার বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ প্রশাসনিক বৈঠকে জেলায় প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে রিপোর্ট নেবেন তিনি৷ পরে স্টেডিয়াম মাঠে প্রশাসনিক সভায় ১৮১টি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করবেন৷ জেলাশাসক ইয়েচুরি রত্নাকর রাও জানিয়েছেন, “প্রশাসনিক সভা থেকে ২০০ কোটি টাকা অর্থমূল্যের ১৮১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী৷”
বস্তুত, মুর্শিদাবাদ এখন আর কংগ্রেসের দুর্গ নেই৷ মুর্শিদাবাদ মানেই অধীর, এই প্রবাদ এখন ইতিহাস৷ মুর্শিদাবাদ ও কান্দি বাদে জেলার বাকি সব পুরসভা বিরোধীদের হাতছাড়া৷ জেলা পরিষদ দখলে রাখতেও ব্যর্থ প্রদেশ সভাপতি৷ দিন দু’য়েক আগে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদও কংগ্রেসের হাত ছেড়ে এসেছে তৃণমূলের হাতে৷ একদা অধীর ঘনিষ্ঠ রেজিনগর বিধানসভার বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরি কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দিয়েছেন তৃণমূল৷ উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে দল ছেড়ে তৃণমূলে এসেছেন জঙ্গিপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা কংগ্রেসের প্রাক্তন পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবও৷
মুর্শিদাবাদ থেকে কংগ্রেস কার্যত নিঃশেষিত হওয়ার পথে৷ এমনকী, নেতারাও যে নানা ঘটনায় হতাশ তারই বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা গেল রবিবার উত্তম মঞ্চে৷ বার বার উঠে এল দল-বদলের প্রসঙ্গ৷ এদিন দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস এক রাজনৈতিক কর্মশালার আয়োজন করে৷ যেখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নিজেই মুর্শিদাবাদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন৷ বলেন, “বলা হচ্ছে মুর্শিদাবাদ আর কংগ্রেসের দুর্গ, অধীর চৌধুরির দুর্গ নেই৷ একটা হাওয়া তৈরি করে দেওয়া হয়েছে যে, কংগ্রেস শেষ৷ চার মাসের মধ্যে এমন কী উন্নয়নের ভূমিকম্প হয়ে গেল যে, সবাই দল ছাড়ছেন৷ নিরপেক্ষ ভোটে এর প্রমাণ হবে৷”
বিধানসভা ভোট শেষ হওয়ার চার মাসের মাথায় অধীর স্বীকার করে নিয়েছেন, সিপিএমের সঙ্গে জোট ছিল শুধুমাত্র আপেক্ষিক৷ কারণ তিনি বলেছেন, “আমরা তো জেতার জন্য লড়াই করিনি৷ জিতব কী করে কংগ্রেসের সারা রাজ্যে তো শক্তিই নেই৷”
উল্লেখয্যেগ্য হল দলত্যাগীদের উদ্দেশে কংগ্রেস নেতাদের কুৎসিত আক্রমণ৷ যাঁরা কংগ্রেস ছাড়ছেন, তাঁদের কুকুরের সঙ্গে তুলনা করেন প্রদীপ ভট্টাচার্যর মতো বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতারা৷ বিশ্লেষকরা প্রশ্ন, দল যখন সংকটে তখন হতাশা থেকেই কি নেতাদের এই আচরণ? মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মান্নান হোসেন এদিন বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেস ও বামেরা পর্যায়ক্রমে জেলায় ক্ষমতায় থেকেছে৷ দীর্ঘ সাত দশক ধরে জেলার উন্নয়ন হয়নি৷ পুজোর আগে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় আসছেন৷ তাঁর হাত ধরেই এগোবে মুর্শিদাবাদ৷ পিছিয়ে পড়ার তকমা ঝেড়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.