সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বাতিলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের সমালোচনা আগেই করেছিলেন৷ এবার চন্দনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে আরও একবার নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জানালেন, ঠাকুরের জন্য যে মিষ্টি কিনে আনবেন, সে পয়সাও হাতে নেই তাঁর৷
কালো টাকা রুখতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ঢঙেই মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করেছে কেন্দ্র৷ মোদির এ সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মমতা৷ টুইট করে এই ‘তুঘলকি’ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জানিয়েছিলেন, সাধারণ মানুষ কী করে চাল-আটা কিনবেন? এদিন মোদিকে আবারও একহাত নিলেন তিনি৷ বললেন, মাছ-বাজার থেকে সবজি-বাজার সব বন্ধ৷ সারা দেশে যেন অঘোষিত বনধ চলছে৷ দেশ জুড়ে এত টাকার ব্যবসা নষ্ট হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকেই দায়ী করেন তিনি৷
সাধারণ মানুষ কতটা বিপদে পড়েছে নিজেকে দিয়ে সেই অসহায়তার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন তিনি৷ জানান, তিনি সরকারি টাকা নেন না, সরকারের দেওয়া বাড়িতেও থাকেন না৷ বই বিক্রি থেকে পাওয়া রয়্যালটিই তাঁর উপার্জন৷ কিন্তু এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন তিনিও৷ কেননা ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে গিয়ে ১০০ টাকার নোট পাননি৷ ফলে ঠাকুরের মিষ্টি কিনে আনবেন এরকম পয়সাও হাতে নেই তাঁর৷ আর এরপরই তাঁর প্রশ্ন, যদি বিকল্প ব্যবস্থাই না থাকে, তাহলে তড়িঘড়ি এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া কেন? চিদম্বরম অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন নির্দিষ্ট সংখ্যক ৫০০ টাকার নোট বাতিলের প্রসঙ্গ তুলে মমতা জানান, সেবার যেরকম পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল৷ এবারের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে পরিকল্পনাহীনতার ছাপ স্পষ্ট বলেই অভিযোগ তাঁর৷
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে রীতিমতো তুলোধোনা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ জানান, নির্বাচনের আগে মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা করে পৌঁছে যাবে৷ কিন্তু টাকা দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে সাধারণের থেকে টাকা কেড়ে নিচ্ছে মোদি সরকার৷ ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যাঁদের কোটি কোটি টাকা আছে তাঁদের কথা আলাদা৷ কিন্তু যাদের সপ্তাহের উপার্জনটুকু সম্বল তাদের কথা ভাবা হয়নি৷ ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন মানুষ৷ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই এরকম হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ সাধারণ মানুষের এই দুরবস্থায় তিনি যে ভাল নেই সে কথাও জানান তিনি৷ এদিন জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে দেবীর কাছে তাই সাধারণ মানুষের হয়ে বিচার প্রার্থনা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷
এদিকে মমতার এই অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও৷ যদিও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার মোদির সিদ্ধান্তকে স্বাগতই জানিয়েছেন৷ কেন্দ্রে শাসকদল বিরোধী যে তৃতীয় শক্তি জোট বাঁধছিল, এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সেখানে কি আবার মতবিরোধ দেখা দিল! উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের প্রাক্কালেই মোদির এই সিদ্ধান্তের পিছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল বলেই মনে করছেন অনেকে৷ ভোট বৈতরণি পেরতে কালো টাকার লেনদেন রাতারাতি বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি৷ তবে তাছাড়াও বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরাতেও তার এই সিদ্ধান্ত যে দড়, তাও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.