সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বুধবার শিলিগুড়ির জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে ইস্যুগুলি তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছিলেন, দিনহাটা থেকে প্রত্যেকটির পালটা দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই সঙ্গে দিনহাটাবাসীদের শপথ নিতে বললেন, দেশ বাঁচাতে বিজেপিকে হটাতেই হবে। মমতার কথায়, বিনাশকারী, দাঙ্গাকারী, ডাকাতের দল আর নয়। শিলিগুড়ির সভায় মুখ্যমন্ত্রীকে ‘স্পিড ব্রেকার’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন মোদি। জবাবে মোদিকে ‘এক্সপায়ারি প্রধানমন্ত্রী’ বলে তাঁর কাজের কড়া সমালোচনা করলেন মমতা।
দিনহাটার সভায় প্রথমেই মোদির সভার জন্য সাধারণ মানুষকে যে সমস্যায় পড়তে হয়েছে, তার সমালোচনা করেন মমতা। বলেন, “একটি মিটিংকে কেন্দ্র করে রাস্তা বন্ধ, আকাশ বন্ধ, এসব ঠিক নয়।” এরপরই রাজ্যে তৃণমূল সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন তিনি। শিলিগুড়িতে মমতাকে আক্রমণ করে মোদি বলেছিলেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী গরিবদের জন্য কোনও কাজ করেননি। বরং তিনি উন্নতি পথে সবসময়ই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অর্থাৎ স্পিড ব্রেকারের কাজ করেছেন মাত্র। তারই পালটা দিয়ে রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজ সাথী প্রকল্পের কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানান, গত সাড়ে সাত বছরে এ রাজ্যে যা উন্নতি হয়েছে, গরিবদের জন্য যত কাজ হয়েছে, গত পাঁচ বছরে মোদি সরকার তার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি।
তৃণমূল সরকারের আমলে কোচবিহারে মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তাঘাট, কলেজ, বিনামূল্যে চিকিৎসা, সবই হয়েছে। কোনও কিছুর অভাব রাখা হয়নি। ছিটমহলের সমস্য়াও মিটেছে। এরপরই প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে জোর গলায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আসুন বিতর্কে। আপনি প্রশ্ন করবেন আমি জবাব দেব। আমিও প্রশ্ন করব। দেখব জবাব দিতে পারেন কিনা। মানুষকে বোকা বানিয়ে ভোট পেয়েছেন। আর মিথ্যে বলবেন না। হ্যাঙারের নিচে দাঁড়িয়ে কথা বলেন। ফলাফলের পর ওই হ্যাঙারেই ঢুকে পড়তে হবে।”
বেকারত্ব এবং এনআরসি প্রসঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আজ আমরা ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমিয়েছি। ১৪৪ কোটি কর্মদিবস তৈরি করেছি। ১০০ দিনের কাজেও বাংলাই ভারতের মধ্যে সেরা হয়েছে। আপনি কী করেছেন এক্সপায়ারি বাবু? এনআরসি করবেন? আরে আগে একটা আসন পেয়ে তো দেখান। আগে দিল্লি সামলান, তারপর বাংলা।” এখানেই থামেননি তিনি। হিটলারের সঙ্গে মোদির তুলনা টেনে জনতাকে প্রশ্ন করেছেন, “এমন একটা মানুষকে আপনারা প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন?” বালাকোট নিয়ে মমতাকে আক্রমণেরও কড়া জবাব দিয়েছেন মোদি। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে এক জনসভায় ভারতীয় সেনাকে ‘মোদির সেনা’ বলে সম্বোধন করে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা সুর চড়ান, “মোদির সেনা আবার কী? মোদি তো দাঙ্গাবাজ। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার খবর আগে থেকেই ছিল কেন্দ্রের কাছে। তখন তিনি কেন কিছু করেননি? দেশকে বেচে দিয়েছেন। দেশের ক্ষতি করেছেন। ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করে লাভ নেই।”
মোদিকে তুলোধোনার পাশাপাশি কোচবিহার কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিককেও একহাত নেন মমতা। সিবিআই রিপোর্ট তুলে ধরে বলেন, এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বেআইনি অস্ত্র, সম্পত্তির মামলা চলছে। এই সমস্ত প্রার্থী দিয়ে যে বাংলাকে জয় করা যাবে না, সেটাই বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দেশকে বাঁচাতে ও দিল্লিতে বদল আনতে রাজ্যবাসীকে নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ছবি: দেবাশিস বিশ্বাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.