প্রতীকী ছবি।
সৈকত মাইতি, তমলুক: শুভেন্দুর জেলায় বিদ্রোহ ঘোষণা করার মত ক্ষমতাই নেই ‘দলবদলু’ সিপিএম নেতাদের! তাই শুভেন্দু ঘনিষ্ঠরা জেলা সভাপতি পদে বসায় ক্ষোভ অভিমান থাকলেও বেশ খানিকটা কোনঠাসা হয়ে পড়লেন সিপিএম থেকে আসা দিলীপ, সুকান্ত গোষ্ঠীর জেলা বিজেপির নেতারাই। এক কথায় বলতে গেলে এই সভাপতি বদল ঘিরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বিজেপিতে সুকান্ত-দিলীপ জমানার পর নতুন করে শুরু হতে চলেছে এক নতুন অধ্যায়! এদিকে দিলীপ-সুকান্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে সিপিএম থেকে আসা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুদাম পন্ডিতরা এখন প্রায় দিশেহারা!
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সাল নাগাদ সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন সদ্য প্রাক্তন বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দোপাধ্যায়। ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি আচমকা বিজেপির জেলা সভাপতি পদে বসে যান। দলীয় কর্মী সমর্থকদের অভিযোগ, তখন থেকেই শুরু হয় বিজেপির আদি-নব্যের ঠান্ডা লড়াই!
তবে তপনবাবু একা নন, তাঁর মতো সিপিএম থেকে আসা বহু নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েই নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। সেই তালিকায় রয়েছেন, বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক নন্দকুমার মাইতি। যিনি ২০১৯ সালে সিপিএম থেকে এসেই বিজেপির জেলা নেতৃত্বের পদে বসেছিলেন। একইভাবে ময়নার বাসিন্দা বিজেপির জেলা সম্পাদক চন্দন মণ্ডল। যিনি ২০১৩ সালে সিপিএমের জেলা পরিষদের প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েই তিনি জেলা সম্পাদক পদে আসীন হন। পাঁশকুড়ার বাসিন্দা তথা বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার কোষাধ্যক্ষ জগদীশ প্রামাণিকও সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। এই জগদীশ প্রামানিকের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন দলেরই কর্মী সমর্থকরা। একইভাবে পাঁশকুড়ার বাসিন্দা বিজেপির জেলা সম্পাদিকা স্বাগতা মান্নাও সিপিএম থেকে বিজেপিতে এসেই পদ পেয়েছেন। স্বভাবতই সিপিএম থেকে আসা এক ঝাঁক নেতাদের রাতারাতি দলের শীর্ষে টেনে আনায় হতাশায় ভুগতে শুরু করেন দলের পুরনো দিনের সৈনিকরা।
এদিকে আবার তৃণমূল ছেড়ে শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদান করলে আদি-নব্য লড়াইটা আরও খানিকটা জটিল হয়ে ওঠে। যার পরিণতি হিসেবে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন বিজেপিতে যোগ দেওয়া সিপিএম নেতারা। এমন অবস্থায় আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের টিকিট বন্টন থেকে শুরু করে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে শুভেন্দু অনুগামী সহ রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে মতপার্থক্য তৈরি হয়। আর তার জেরেই জেলাজুড়ে বহু ক্ষেত্রেই দলেরই একাধিক নেতাকর্মীরা নির্দল প্রার্থী হিসেবে নিজেদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে পড়েন। তবে ঘটনা যাই ঘটুক, দিলীপ সুকান্ত ঘনিষ্ঠদের সরিয়ে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠরা জেলা বিজেপির ব্যাটন হাতে তুলে নিলেও যে কোনও ভাবেই কোনও বিদ্রোহের অবকাশ নেই তা মেনে নিয়েছেন দলেরই একাংশ নেতৃত্ব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক জেলা নেতা দাবি, সংগঠন পরিচালনা ক্ষেত্রে সেভাবে কোন সদর্থক ভূমিকা নিতেই পারেননি সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। উলটে যোগ্যদের দলে জায়গা না দিয়ে অযোগ্যদের প্রাধান্য দেওয়াতে ক্রমশই ক্ষোভ বাড়ছিল দলের অন্দরে। আর তাতেই এই পরিণতি।
এ বিষয়ে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার প্রাক্তন সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য খানিকটা ক্ষোভের সুরেই বলেন, “মানুষের শুভেচ্ছা এবং আশীর্বাদে এবারে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে অভাবনীয় ভাবে সারা রাজ্যের মধ্যে সেরা ফলাফল হয়েছে এ জেলাতে। কিন্তু তারপরেও কেন আমাকে পদ থেকে সরতে হল তা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরাই বলতে পারবেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.