বাবা সঞ্জয় পাল, বিডিও প্রণব কুমার মণ্ডল ও বিধায়ক অরুণাভ সেনের সঙ্গে ছাত্রী সুস্মিতা।
সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: অসীম সাহসে নিজের বিয়ে রুখেছিল। পরে আরও পাঁচজন ছাত্রীর বাল্যবিবাহ রুখে এখন প্রাণনাশের হুমকির মুখে স্কুল ছাত্রী। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, খুনের পাশপাশি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি পেয়েছে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুস্মিতা পাল। একবার নয় বারবার রীতিমতো শাসানি চলতে থাকে। আতঙ্কে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ছাত্রীর বাবা সঞ্জয় পাল। কিন্তু হুমকির সামনে মাথা নুইয়ে ফিরে আসতে রাজি নয় সুস্মিতা। তাই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাগনান-২-এর বিডিও প্রণব কুমার মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করেছে সুস্মিতা। ঘটনাস্থল বাগনান থানার আন্টিলা গ্রাম।
সুস্মিতার দুশ্চিন্তার কথা শুনে সোমবার সন্ধ্যায় ছাত্রীর বাড়িতে উপস্থিত হন বিডিও। সঙ্গে যান বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ সেন। টালির চালের নিকানো বারান্দায় বিডিওর উপস্থিতি টের পেয়ে হতচকিত সঞ্জয়বাবু। কোথায় যে বসতে দেবেন বুঝতে পারছিলেন না। তবে বাবা-মেয়ের সংকোচ কাটাতে বেশি সময় নেননি বিডিও। দু’জনের সঙ্গেই দীর্ঘক্ষণ কথা বলে নিরাপত্তার আশ্বাসও দেন। একইসঙ্গে সুস্মিতার উচ্চশিক্ষার দায়িত্বও নিয়েছে ব্লক প্রশাসন। তাও জানিয়ে দিয়েছেন। এমনিতেই মৃত্যুভয় ও আশ্রয়হীনতার আতঙ্কে ভুগছিল গোটা পাল পরিবার। বিডিও ও বিধায়কের আশ্বাসের পর ফের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে সুস্মিতা। একই অবস্থায় সঞ্জয়বাবুর। এদিকে পাল বাড়িতে বিডিও আসার খবর চাউর হতে সময় নেয়নি। স্বাভাবিকভাবেই হুমকিদাতারা মুখ লুকনোর জায়গা খুঁজতে শুরু করেছে।
নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়েই পেশায় মৃৎশিল্পী সঞ্জয় পালের সংসার চলে। অভাব অনটনের মধ্যে বেড়ে উঠছে মেয়ে সুস্মিতা। তাঁর উপরে আছেন বৃদ্ধ বাবা-মা। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্য বেশ কিছুদিন শয্যাশায়ী ছিলেন সঞ্জয়বাবু। অসুস্থ হয়ে পড়ে সুস্মিতাও। সে এখন চন্দ্রভাগ শ্রীকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। ফের পড়াশোনা শুরু হলেও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি ওই ছাত্রী। ১৮ বছরের কম বয়সী মহিলাদের বিবাহের কুফল সম্পর্কে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রচার তাকে আকৃষ্ট করেছিল। বুঝতে পেরেছিল শরীর ও মনের বিকাশ না ঘটলে বিবাহ অনুচিত। এরপরই বাল্যবিবাহ রোধে উঠেপড়ে লাগে ওই ছাত্রী। যখনই জেনেছে তার দিদি বা বোনের বয়সী কাউকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো হচ্ছে, তখনই পৌঁছে গিয়েছে বিয়ে বাড়িতে। কখনও একাই রুখে দাঁড়িয়েছে, কখনও আবার পুলিশ ও সহপাঠীদের সাহায্য নিয়েছে। এই বয়সে মেয়েদের বিয়ে হলে কী কী শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে তানিয়েও পাত্রীদের বাবা-মাকে বুঝিয়েছে।
নিজের মুখেই সংগ্রামের কাহিনীর পাতা খুলেছে সুস্মিতা। জানিয়েছে, নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণি মিলিয়ে পাঁচজনের বাল্যবিবাহ রোধ করেছে। দারিদ্রতার কারণে তারও বিয়ের বন্দোবস্ত করা হয়। জানতে পেরে এক বাক্যেই না বলে দিয়েছিল সুস্মিতা। বিধায়ক অরুণাভ সেন জানান, সুস্মিতা পাঁচ পাঁচটা বাল্যবিবাহ রুখে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে। এই লড়াইকে তাঁরা সম্মান করেন। সুস্মিতা ও তার পরিবারের নিরাপত্তার পাশপাশি উচ্চশিক্ষার যাবতীয় দায়িত্বও নিয়েছে প্রশাসন। বিডিও প্রণববাবু, সুস্মিতাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের “কন্যাশ্রী” বলেছেন। ওই ছাত্রীকে নিজের মেয়ের আসনেই বসিয়েছেন বিডিও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.