শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: চোপড়ায় রাজনৈতিক সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ কংগ্রেস সমর্থক মহম্মদ হাসিবের মৃত্যু হল আজ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সোমবার গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রথমে হাসিবকে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করা হয়। তারপর রাত থেকে অবস্থার অবনতি হলে, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের কথা ভাবলেও, তার সুযোগ হয়নি। মঙ্গলবার সকালে মহম্মদ হাসিবের মৃত্যু হয়েছে। ভোট ঘোষণার পরপরই উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় রাজনৈতিক সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। তাঁদের আশঙ্কা, নির্বাচনী আবহে এধরনের অশান্তি আরও বাড়বে।
এদিকে, কংগ্রেস সমর্থক মহম্মদ হাসিবের মৃত্যুর পরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষজন। উত্তেজিত জনতা তৃণমূল কর্মী, সমর্থকদের বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করেন বলে অভিযোগ। এমনকী ডাঙাপাড়ার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ উজির-সহ চারটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ফের ধুন্ধুমার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় গিয়েছে পুলিশ বাহিনী।
সোমবার সকালে চোপড়ার লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙাপাড়ায় এক পুলিশ কর্মীকে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট দিতে যাচ্ছিলেন মাসুদ আলম নামে ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। অভিযোগ, সেই সময় তাঁর পথ আটকায় কয়েকজন দুষ্কৃতী। মাসুদ আলমকে টানতে টানতে এলাকারই একটি ঘরে নিয়ে যায় তারা। সেখানে তাঁকে মারধর করা হয় বলে পুলিশ সূত্রের খবর। বিষয়টি টের পেয়ে ঘটনাস্থলে জড়ো হন তৃণমূল এবং কংগ্রেসের কর্মী, সমর্থকরা। অভিযোগ, সিভিক ভলান্টিয়ার নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে বচসায় জড়িয়ে পড়েন দু’দলের কর্মীরা। হাতাহাতির পর চলে গুলিও। জানা গিয়েছে, অন্তত ২ রাউন্ড ছররা গুলি চালানো হয়। গুলিবিদ্ধ হন কংগ্রেস সমর্থক মহম্মদ হাসিব। তিনি সোমবার রায়গঞ্জ থেকে ডাঙাপাড়ার বাড়িতে ফিরছিলেন। সংঘর্ষে মধ্যে পড়ে জখম হন তিনি, পায়ে গুলি লাগে তাঁর। এলাকায় গুলির লড়াই চলছে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় চোপড়া থানার পুলিশ। গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ডাঙাপাড়ায় মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী।
চাহিদা বাড়ছে সেভেন এমএম-এর, ভোটের মুখে নজরে ‘মুঙ্গেরি মিস্ত্রি’
সোমবার রাত থেকে হাসিবের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাঁর শরীর থেকে গুলি বের করার জন্য অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। আজ সকালে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। মৃত্যু হয়েছে তাঁর। দলের সমর্থকের মৃত্যুর পরই খেপে ওঠে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। এদিন বেলা একটু গড়াতেই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ডাঙাপাড়া-সহ আশেপাশের গ্রাম।
আগামী ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় রায়গঞ্জে লোকসভা নির্বাচন। উত্তর দিনাজপুরের এই সমস্ত এলাকা নির্বাচন কমিশনের কাছে বরাবরই স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত। প্রতিবার ভোটের মরসুমে সেখানে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেই থাকে। এবারও ভোট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে অশান্তি। আর রাজনৈতিক সংঘর্ষের মাঝে পড়ে সিভিক ভলান্টিয়ার মাসুদ আলমের মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিল প্রশাসনের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.