সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে রবিবারও উত্তাল পাহাড়। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মিছিলকে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধল পুলিশ ও মোর্চা সমর্থকদের মধ্যে। পাহাড়ের হিংসাত্মক আন্দোলনের রেশ এবার ছড়িয়ে পড়ছে ডুয়ার্সেও। রবিবার মোর্চা ও পুলিশের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ভারত-ভুটান সীমান্তের জয়গাঁ।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ‘গ্লোবাল ইউনিটি’ যাত্রাকে কেন্দ্র করে রবিবার দফায় দফায় লাঠি, গুলি, রাবার বুলেট, জলকামানে উত্তপ্ত হয়ে উঠল সীমান্ত লাগোয়া শহরাঞ্চল। ঘটনায় এক পুলিশকর্মী-সহ জখম হয়েছেন মোট ৮ জন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, দাবি করেছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ডুয়ার্স শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রোহিত থাপা। জখম মোর্চা সমর্থকদের বীরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। আহত জয়গাঁ থানার পুলিশ অনিশ বর্মনকে স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ এদিন কার্যত বিনা প্ররোচনায় গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মোর্চা নেতারা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ। তিনি বলেন, “অনুমতি ছাড়াই রবিবার মিছিল করে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। এই মিছিল থেকে অশান্তি তৈরির সম্ভাবনা ছিল। তাই তাদের মিছিল আটকায় পুলিশ। পুলিশের উপর অতর্কিতে হামলা চালায় মোর্চা কর্মী-সমর্থকরা। বাধ্য হয়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। কোনও গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেনি। বরং আন্দোলনকারীদের ঢিলে একজন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন।” এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার।
উল্লেখ্য, রবিবার পাহাড়, সমতলের বিভিন্ন জায়গায় ‘গ্লোবাল ইউনিটি’ যাত্রার নামে মিছিলের ডাক দেয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। ডুয়ার্সের বীরপাড়া, কালচিনি, জয়গাঁতে এদিন সকাল ১০টা থেকে মিছিল বার করে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। বীরপাড়া ও কালচিনিতে অশান্তি তেমন না হলেও এই মিছিলকে কেন্দ্র রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় জয়গাঁ। মংলাবাড়ি এলাকায় মিছিল বার করেন প্রায় ৩-৪ হাজার গোর্খা সমর্থক। অনশন মঞ্চ থেকে প্রায় ৮০০ মিটার দূরে গোপিমোহন চৌপথিতে মিছিল আটকায় পুলিশ। মিছিল আটকানোর পরই পুলিশের সঙ্গে মোর্চা সমর্থকদের বচসা শুরু হয়। মোর্চার মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন রোহিত থাপা, মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মদন লামারা। মোর্চা নেতৃত্ব মিছিলে অংশ নেওয়া সমর্থকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন কিন্তু কেউই নেতাদের কথা শোনেননি। প্রথমে বচসা, পরে হাতাহাতি ও সংঘর্ষ শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যাপক পাথরবৃষ্টি শুরু করে বিক্ষোভকারীরা।
বেগতিক বুঝে টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটাতে শুরু করে পুলিশ। জলকামান ও রাবার বুলেট ফায়ারিং চলে। মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে লাগাতার প্রায় এক ঘন্টা জলকামান, টিয়ার গ্যাসের শেল, রবার বুলেট ছুড়তে থাকেন পুলিশ কর্মীরা। তাতেও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় মঙ্গলাবাড়িতে মোর্চার নেতাদের পরিস্থিতি শান্ত করার আবেদন জানায় পুলিশ। পুলিশের আবেদন সাড়া দিয়ে মোর্চা নেতারা মাইক হাতে পরিস্থিতি শান্ত করার আবেদন জানান। শেষ পর্যন্ত বিকেল ৪টে নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ফাঁকা হয়ে যায় ভুটানগামী মূল রাস্তা। তবে এর পরেও রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় টায়ার জ্বালিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন মোর্চার সমর্থকরা। মোর্চার ডুয়ার্সের নেতা মদন লামা বলেন, “আজ পুলিশের সঙ্গে তৃণমূলকর্মীরা অতর্কিতে মোর্চার মিছিলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোনও প্ররোচনা ছাড়াই পুলিশও গুলি চালাতে শুরু করে। পরিকল্পনা করে এই হামলা চালিয়েছে পুলিশ ও তৃণমূল। আমরা এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।” যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল দায় চাপিয়েছে বিজেপির কাঁধে। বিজেপিও অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.