অঙ্কন: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: গ্রামে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে বাইরে কর্মরত গ্রামের শ্রমিকদের আশ্রয় দেওয়াকে ঘিরে বোমাবাজি ও গুলিতে মৃত্যু হল একজনের। আহত আরও এক। শনিবার রাতে এই ঘটনা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বীরভূমের পাড়ুই থানার তালিবপুর গ্রাম। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক বোমাবাজি এবং গোলাগুলি চলে। শেখ শ্যামবাবু নামে বছর উনচল্লিশের এক ব্যক্তির বুকে গুলি লাগে। তারপর তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা মারার অভিযোগ ওঠে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। তার ভাই শেখ লালচাঁদ গুলিতে জখম হন। পুলিশের সামনেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। আজ সকাল থেকে থমথমে গ্রাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাড়ুই থানার বনসংখ্যা পঞ্চায়েতের তালিবপুর গ্রামের ৮-১০ জন গ্রামাবাসী কেরল এবং মহারাষ্ট্রে কাজ করেন। কয়েকদিন আগে তাঁরা গ্রামে ফিরে এলে স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হয় শারীরিক পরীক্ষার জন্য। এদিকে, স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে তালিবপুর গ্রামে তালিবপুর হাইস্কুলের হস্টেলকে করোনা মোকাবিলায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঠিক হয়, ওই শ্রমিকদের হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে এনে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হবে। এই বিষয়টি সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে গ্রামবাসীদের একটা অংশ। তাঁরা জানিয়ে দেন, হস্টেলে শ্রমিকদের রাখা যাবে না। গ্রামে সংক্রমণ ছড়িয়ে পরতে পারে। তাই তাঁদের হাসপাতালেই রাখতে হবে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এই নিয়ে শনিবার সকাল থেকে গ্রামের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা চলছিল। স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ আবদুলহাই বিক্ষোভকারীদের সাফ জানিয়ে দেন, হস্টেলটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হবেই। সেইমতো কাজ শুরু হয়ে যায়। এই নিয়ে বিরোধ চরমে ওঠে। পাড়ুই থানার পুলিশ এবং প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে দশজন গ্রামবাসীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এদিন সন্ধের পর থেকে গ্রামের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। বিক্ষিপ্তভাবে বোমাবাজি চলতে থাকে।
খবর পেয়ে পুলিশ গ্রামে পৌঁছে যায়। সন্ধে ৭টার পর ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। বোমাবাজির পাশপাশি চলে গুলিও। শেখ শ্যামবাবু নামে এক ব্যক্তির বুকে গুলি লাগে। তাঁকে লক্ষ্য করে বোমাও ছোঁড়া হয়। গুরুতর জখম হয়ে ঘটনাস্থালে তাঁর মৃত্যু হয়। আহত হন তাঁর ভাই শেখ লালচাঁদ। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গ্রামের বাসিন্দা শেখ আব্বাস বলেন, “গ্রামে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি হলে, রোগ ছড়িয়ে পড়বে। এই ভয়ে গ্রামবাসীরা বাধা দিয়েছিল। তারপরেই এই সংঘর্ষ হয়।” যদিও পুলিশের দাবি, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলা নিয়ে নয়, নিতান্ত গ্রাম্যবিবাদেই গুলি-বোমা চলেছে। শনিবার রাত পর্যন্ত অশান্তি ছিল গ্রামে। তা এড়াতে আজ সকাল থেকে গ্রামে মোতায়েন পুলিশ। গোটা গ্রামে থমথমে পরিবেশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.