সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: বঙ্গ বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল ফের চরম আকার নিল। এবার দলের বিধায়কের সঙ্গেই কাজিয়ায় জড়িয়ে পড়লেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। লালবাগে সুকান্তর কর্মসূচিতে অনুপস্থিত ছিলেন দলের বিধায়ক গৌরীশংকর ঘোষ। যিনি আবার কি না দলের জেলা সভাপতিও ছিলেন কিছুদিন আগেও। আর এটা নিয়েই বিজেপির রাজ্যসভাপতির সঙ্গে দলের বিধায়কের কাদা ছোড়াছুড়ির সাক্ষী হল মুর্শিদাবাদ। সুকান্তর জেলা সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার, লালবাগে ভাগীরথী নদী ভাঙন, নসিপুর রেল সেতু পরিদর্শন এবং জংলি কালীমন্দিরে পূজাদানের কোথাও সুকান্তর ধারেকাছে দেখা যায়নি স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক গৌরীশংকরকে। যা নিয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “বিজেপির সংগঠন মূল কথা। বিজেপি হাজার হাজার জনপ্রতিনিধি তৈরি করে আবার তাদের তুলে ফেলেও দেয়, ফলে বিজেপিতে কে সাংসদ কে বিধায়ক, তা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। স্বাভাবিকভাবে কে এল, আর এল না তাতে কিছু এসে যায় না।” এর পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরীশংকর ঘোষ সুকান্তকে ‘উচ্চ শিক্ষিত, দাম্ভিক’ বলে কটাক্ষ করেন। এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি কতটা সাংগঠনিক তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। দলীয় সূত্রে খবর, নতুন রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে এবং জেলা সংগঠনে তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে মাসকয়েক আগেই রাজ্য কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন গৌরীশংকর ঘোষ। ফের তাঁর সঙ্গে সুকান্ত তথা রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এল।
এদিন নিজের খাসতালুকে বসে গৌরী ঘোষ সুকান্তকে নজিরবিহীনভাবে আক্রমণ করে বলেন, “উনি(সুকান্ত) বিজেপির কতটুকু সংগঠন করেছেন আমার জানা নেই। তবে সংগঠক হিসাবে কেউ বলতে পারেন না জনপ্রতিনিধিকে তুলে ফেলে দেওয়া যায়। আসলে উনি প্রচুর শিক্ষিত তাই দাম্ভিকতা থেকেই এসব বলেছেন। এটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার।” এরকম চলতে থাকলে আগামী তিন বছর সুকান্ত রাজ্য সভাপতির পদ ধরে রাখতে পারবেন কি না সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন গৌরীবাবু। এদিকে, নারকেলডাঙার ঘটনার প্রতিবাদে, নারী সুরক্ষার দাবিতে শুক্রবার বিজেপির মহিলা মোর্চার। মিছিলকে ঘিরে ধুন্ধুমার হয় হাজরা মোড়ে। মহিলা মোর্চার কর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি চলে পুলিশের।
এদিন যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশন থেকে মিছিল শুরুর আগেই মেট্রো স্টেশনের ভিতরে ঢুকে পুলিশ মহিলা মোর্চার সমর্থকদের গ্রেফতার করে। পুরুষ পুলিশ কেন মহিলাদের আটক করছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রী তনুজা চক্রবর্তী। বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের নেতৃত্বে এক দফা বিক্ষোভ হয় ভবানীপুর থানার সামনে। এদিকে, শুক্রবার দুপুরে কৃষ্ণনগরে এক দলীয় কর্মসূচি থেকে দলমত নির্বিশেষে মানুষের জোট তৈরি করে নবান্ন অভিযানে শামিল হওয়ার ডাক দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। রাজনৈতিক মহলের মত, ফের মানুষের জোট করার ডাক দিয়ে কি সিপিএ, কংগ্রসের কর্মী, সমর্থকদেরও গেরুয়া পতাকাতলে আনতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি। বঙ্গে বিজেপির সাফল্যের গ্রাফ যখন ক্রমশ নামছে, তখন কি সরকার বিরোধিতায় সিপিএম—কংগ্রেস সমর্থকদের মন পেতে চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির। এরপরে ইডি বা সিবিআইয়ের নজরে কে, সেই বিষয়ে নদিয়ায় এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর কৌশলী মন্তব্য, বুদ্ধিমান মানুষ যারা খবর দেখেন বা পড়েন, তাঁরাই বুঝতে পারবেন, এরপরে কার পালা? সুকান্তর কথায়, “ক্রমশ প্রকাশ্য। এপিসোড চলছে, দেখতে থাকুন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.