চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: এলাকায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার নিয়ে আপত্তি স্থানীয় বাসিন্দাদের। আর তা নিয়েই মঙ্গলবার সকাল থেকে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধে উত্তপ্ত আসানসোলের জামুড়িয়ার চুরুলিয়া। জনতার আক্রমণের মুখে পড়ে জখম পুলিশ কর্মী। পুলিশকে লক্ষ্য করে চলে বোমাবাজি, ছোঁড়া হয় গুলিও। ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের গাড়ি। সূত্রের খবর, কর্মী, আধিকারিক-সহ আহত হয়েছেন প্রায় ২০ জন। জামুড়িয়ার বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁদের চিকিৎসা চলছে। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও। সংবাদমাধ্যমের গাড়ির উপরও হামলা চলে বলে অভিযোগ। দুপুর গড়িয়ে গেলেও অশান্তির আঁচ রয়েছে এলাকায়। মোতায়েন বিশাল পুলিশ বাহিনী।
স্থানীয় সূত্রে খবর, দিন চারেক আগে চুরুলিয়া যুব আবাসকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসেবে তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন আসানসোলের স্থানীয় প্রশাসন। এই খবর ছড়াতেই তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। এরপর মঙ্গলবার সকালে ১৪ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য ওই যুব আবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। আর তাতেই আগুনে ঘি পড়ে। এলাকার মানুষজন রীতিমত খেপে ওঠেন। তাঁদের দাবি, করোনা সন্দেহে কোনও বহিরাগতদের এই যুব আবাসে রাখা যাবে না। তাঁদের থেকে এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।
পুলিশ তাঁদের বোঝাতে গেলে হাতাহাতি বেঁধে যায়। উত্তেজিত জনতা গুলি-বোমা ছোঁড়ে বলে অভিযোগ। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে পালটা কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশও। মুহূর্তের মধ্যে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় আসানসোলের চুরুলিয়া এলাকা। এমনকী বাইক-সহ গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমত হিমসিম খেতে হয় জামুড়িয়া থানার পুলিশকে। ইট, রড নিয়ে জনতার সমবেত আক্রমণের মুখে পড়ে পা ভেঙে গিয়েছে জামুড়িয়া থানার ওসি সুব্রত ঘোষের।
ধুন্ধুমার পরিস্থিতির খবর পেয়ে সেখানে যান আসানসোল পুরনিগমের মেয়র পারিষদ পূর্ণশশী রায়। তিনিই আহত পুলিশকর্মীদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন। আসানসোল জেলা হাসপাতাল-সহ স্থানীয় একাধিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁদের চিকিৎসার জন্য ভরতি করানো হয়। ওসি থেকে কনস্টেবল – সকলেই কমবেশি আহত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
জানা গিয়েছে, সোমবার রাতেও একইরকম একটি ঘটনা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সালানপুরের রূপনারায়ণপুর চেকপোস্ট এলাকা। সেখানে জেলা পরিষদের একটি বাংলোকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনের আপত্তির জেরে রাতে পিছু হঠতে হয় পুলিশকে। রাতে তির-ধনুক নিয়ে তাঁরা পুলিশের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। বাধার মুখে পড়ে বাংলোটি আর কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করা যায়নি। এরপর আজ সকালে চুরুলিয়ায় এই ঘটনা।
বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া সালানপুর কিংবা বীরভূম-আসানসোলের প্রান্তে থাকা চুরুলিয়া, সমস্ত এলাকাই কয়লা মাফিয়াদের অধ্য়ুষিত। কয়লার বখরা নিয়ে ছোট-বড় সংঘর্ষ এখানকার পরিচিত দৃশ্য। তবে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার নিয়ে এত বড় সংঘর্ষ এবং এতজন পুলিশের আহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.