সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ভরা হাটে সিভিক ভলান্টিয়ারের মাথায় কুঠারের কোপ বসিয়ে খুন করে পালাল এক আততায়ী। বুধবার বিকালে পুরুলিয়ার ঝালদার তুলিনের হাটবাগানের কাছে একটি খোলা মাঠে হাট–বাজারে এই ঘটনায় হতবাক স্থানীয় বাসিন্দারা। রাঁচি–পুরুলিয়া সড়ক ঘেঁষে থাকা ওই হাটে বুধবার বিকালে নিহত সিভিক ভলান্টিয়ার নিচু হয়ে বসে সবজি কিনছিলেন। সেইসময় পেছন দিক থেকে ওই আততায়ী তাঁর মাথায় কুঠারের কোপ বসিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়া পুলিশের ওই স্বেচ্ছাসেবক ওই অবস্থাতেই তাঁর মাথা থেকে কুঠারটি বার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রক্তক্ষরণে নেতিয়ে পড়েন। পরে ওই হাটে ডিউটিতে থাকা অন্যান্য সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ এলাকার বাসিন্দারা প্রথমে তুলিন প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান। তারপর তাঁকে ঝাড়খন্ডের মুরি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। কিন্তু তাঁর চোট গুরুতর থাকায় সেখান থেকে রাঁচির একটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে তাঁকে রাঁচির মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে তিনি মারা যান। এই ঘটনায় তার স্ত্রী মাধুরি মাহাতো ঝালদা থানায় খুনের অভিযোগ করার পরই পুলিশ মামলা রুজু করেছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগুণ বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে।”
ঝালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, মৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম অঙ্গদ মাহাতো (৩৩)। তার বাড়ি ঝালদা থানার কেন্দুয়াডিতে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লকডাউনের সময় থেকেই হাটবাগানের পাশের মাঠে হাট বসছে। আগে হাটবাগানের হরি মন্দিরের কাছে এই হাট বসত। এই হাট বসে ফি সপ্তাহের বুধ ও শনিবার। এখানে সবজি ছাড়াও মাটির জিনিসপত্র ও জামাকাপড় বিক্রি হয়। ওই সিভিক ভলান্টিয়ার তার গ্রাম কেন্দুয়াডি থেকে ওই হাটে সবজি কিনতে গিয়েছিলেন। সেইসময় একদমই হঠাৎ করে এই ঘটনা ঘটে যায়। তবুও তার মধ্যেই ওই হাটে মোতেয়েন অন্যান্য সিভিক ভলান্টিয়াররা-সহ স্থানীয় বাসিন্দারা ওই আততায়ীকে ধাওয়া করেন। কিন্তু মুখে মাস্ক পরা ওই আততায়ী ভিড়ে মিশে গা ঢাকা দেয়। এই ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আততায়ীর বয়স ২৫ থেকে ৩০ হবে। হাটে আসা আর পাঁচটি সাধারন মানুষের মতই তার পোষাক ছিল। ফলে আলাদা করে ওই আততায়ীকে বুঝতেই পারেননি সেখানে জমায়েত হওয়া মানুষজন। তবে এই ঘটনায় ধন্দে ঝালদা থানার পুলিশ। খুনের মোটিভ কী তা কিছুতেই বুঝতে পারছেন না। এদিকে নিহত সিভিক ভলান্টিয়ারের স্ত্রী মাধুরি দেবী বলেন, “আমাদের কোনও শত্রু নেই। কিভাবে এই ঘটনা ঘটল বুঝতে পারছি না। সন্তানদের নিয়ে এবার পথে বসতে হবে।” ওই সিভিকের দু’মাসের একটি পুত্র সন্তান ছাড়াও চার ও তিন বছরের একটি কন্যা রয়েছে। এই ঘটনার পর ঝালদা থানা এলাকার হাটগুলিতে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.