সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাত পোহালেই রাজ্যের সাত পুরসভার নির্বাচন। ভোট হবে হলদিয়া, দুর্গাপুর, পাঁশকুড়া, কুপার্স ক্যাম্প, নলহাটি, বুনিয়াদপুর ও ধুপগুড়ি পুরসভায়। কিন্তু প্রবল বর্ষণের ভ্রুকুটিতে চিন্তায় ডান-বাম সব পক্ষই। এভাবে বৃষ্টি চললে ভোটারদের বুথমুখী করানোটা চ্যালেঞ্জিং হবে।
নিম্নচাপ অক্ষরেখা ও সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর যুগলবন্দিতে শুক্রবার রাত থেকেই বৃষ্টি নেমেছে কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে। বৃষ্টি চলছে কমবেশি দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায়। উত্তরবঙ্গ আবার নতুন করে মুষলধারে বর্ষণ শুরু হয়েছে। দোমোহনী থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত অসংরক্ষিত এলাকায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। সংরক্ষিত এলাকায় জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা। ভুটান ও সিকিমের পাহাড়ে ভারী বৃষ্টির জেরে উত্তরবঙ্গের নদীগুলিতে জল বাড়তে শুরু করেছে। রবিবারও ভারী বৃষ্টি চলবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। পরিস্থিতি বুঝে শনিবার সন্ধ্যায় উত্তরবঙ্গের জেলাশাসকদের নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ।
আর তার জেরেই চিন্তায় পড়েছেন রাজ্যের ভোট সেনাপতিরা। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনও। বৃষ্টিতে ভোটাররা বুথে এসে যাতে কোনও সমস্যায় না পড়েন তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলিকে। সেইমতো তৈরি থাকছেন জেলাশাসকরাও। সমস্ত বুথে ত্রিপলের ব্যবস্থা রাখতে বলা হচ্ছে। ভোটাররা যে লাইনে দাঁড়াবেন সেখানে ত্রিপল দিয়ে ‘শেড’ তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বৃষ্টির জেরে মানুষ কতটা বুথমুখী হবে তা নিয়ে প্রবল চিন্তায় সকলেই। হলদিয়া ও পাঁশকুড়া পুর নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মানুষ প্রস্তুত। তবে প্রকৃতি যেভাবে বিরূপ মনোভাব দেখাচ্ছে তাতে একটু চিন্তা তো হচ্ছেই।” তবে কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী। দুর্গাপুরে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অরূপ বিশ্বাস বলেন, “মানুষ না বৃষ্টির ঢল কোনটা নামবে তা নিয়ে চিন্তা তো হবেই।’’ নলহাটি পুর নির্বাচনের দায়িত্ব রয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের। তিনিও জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কর্মীরা প্রস্তুত থাকছে। হলদিয়া, দুর্গাপুরের মতো আধুনিক শহরের ভোটিংয়ের ধরনটা অনেকটা কলকাতার মতো। ভোটের হার চট করে বেড়ে যায় না। সেক্ষেত্রে বৃষ্টি চললে মানুষ আদৌ ছাতা মাথায় বুথমুখী হবেন কি না তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির উদ্বেগ স্বাভাবিক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
মেয়াদ উত্তীর্ণ এই সাত পুরসভার কী চিত্র? প্রায় সবক’টিতেই আপাতত ক্ষমতায় রয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বোর্ড। সাত পুরসভায় সবমিলিয়ে ১৫০টি ওয়ার্ডে ভোট হবে। এর মধ্যে দুর্গাপুর কর্পোরেশনে ভোট হবে ৪৩টি ওয়ার্ডে। বর্তমানে এই পুরসভায় ৩৩ জন তৃণমূল কাউন্সিলর রয়েছেন। ১০টি ওয়ার্ড সিপিএমের দখলে। আসন পুনর্বিন্যাসের পর হলদিয়া পুরসভার ওয়ার্ড সংখ্যা ২৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৯। এখানে ২১টি ওয়ার্ড তৃণমূলের, ৫টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছিল সিপিএম। পাঁশকুড়ায় ১৮টি ওয়ার্ডে ভোট হওয়ার কথা। এই পুরসভাও শাসক দলের দখলে। ধূপগুড়ির পুরসভায় ১৬টি ওয়ার্ডে নির্বাচন হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের ১৩, সিপিএমের দু’জন ও বিজেপির এক জন কাউন্সিলর রয়েছেন। নলহাটিতে আসন সংখ্যা ১৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬। ১৫টি ওয়ার্ডের মধে্য ১১টি তৃণমূলের। বাকি চারটির মধ্যে সিপিএম, বিজেপি একটি করে ও দু’টি ওয়ার্ড কংগ্রেসের দখলে। কুপার্সে ১২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টি তৃণমূল কংগ্রেসের। এই পুরসভা আপাতত বিরোধীশূন্য। এবার নতুন পুরসভা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে বুনিয়াদপুর। এখানে ওয়ার্ড সংখ্যা ১৪টি। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সাতটি পুরসভায় ৮০৬টি বুথের জন্য ৩৭২টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.