সৌরভ মাজি, বর্ধমান: সকালেই ফোনে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। জানান, মেসের ম্যানেজারের দায়িত্ব পড়েছে। বাজার করতে যাচ্ছেন। ও ভোটের ডিউটি সেরে শীঘ্রই বাড়ি ফিরবেন। কে জানত সেটাই শেষ ফোন হয়ে যাবে দিনাঙ্করের। শীঘ্রই বাড়ি ফিরবেন। তবে এবার কফিনবন্দি হয়ে।বৃহস্পতিবার ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়ায় বাজার করে ক্যাম্পে ফেরার পথে মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন এই সিআইএসএফ জওয়ান। বৃহস্পতিবার এই বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে একমাত্র তিনিই সিআইএসএফ জওয়ান। বাকিরা সাধারণ নাগরিক বলে জানা গিয়েছে। এদিন দুপুর ৩টে নাগাদ দুঃসংবাদটি আসে দিনাঙ্কর মুখোপাধ্যায় (৫২)-এর বাড়িতে। এরপর থেকেই শোকের পরিবেশ বর্ধমান শহরের ৩ নম্বর ইছলাবাদের ঘোষপাড়ায়। পরিচিতরা ছুটে এসেছেন। সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
এদিন সন্ধ্যায় তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পড়শিরা জটলা করে রয়েছেন। বাড়ির ভিতর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। স্ত্রী মিতা মুখোপাধ্যায় কথা বলার মত অবস্থায় নেই। একমাত্র ছেলে দেবজিৎকে জড়িয়ে ধরে নিজেকেই বোধহয় সান্ত্বনা দিচ্ছেন। মাঝে মাঝে ডুকরে উঠছেন মিতাদেবী। কোনওক্রমে তিনি জানালেন, এদিন সকালেই স্বামী তাঁকে ফোন করেছিলেন। তাঁকে জানান, মেসের জন্য বাজার করতে যাচ্ছেন। মেসের ম্যানেজার হয়েছেন তো তাই বাজার করার দায়িত্ব বর্তেছে তাঁর উপর। আর সেটাই যে শেষযাত্রা হবে কে জানত। এদিন বিকেল ৩টে নাগাদ দান্তেওয়াড়ার সিআইএসএফ ক্যাম্প থেকে মিতাদেবীকে ফোন করে জানানো হয়, দিনাঙ্করবাবু আর নেই।
[শাসকদলের বিধায়ককে ফোনে প্রাণনাশের হুমকি, চাঞ্চল্য চন্দ্রকোণায়]
সেখান থেকে দিনাঙ্করবাবুর পরিবারকে জানানো হয়, পাবলিক বাসে করে বাজার নিয়ে ফিরছিলেন। সেই সময় মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ হয়। বাসের কয়েকজন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। মারা গিয়েছেন দিনাঙ্করবাবুও। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনাঙ্করবাবু আগে বিমানবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ২০১১ সালে সিআইএসএফ-এ যোগদান করেন। সিআইএসএফ-এ তাঁর প্রথম পোস্টিং ছিল আন্দামানে। বর্তমানে গার্ডেনরিচে পোস্টিং ছিল তাঁর। দুর্গাপুজোর আগে বাড়ি এসেছিলেন তিনি। তারপর গার্ডেনরিচে কাজে যোগ দেন। কয়েকদিন আগে ভোটের ডিউটির জন্য দিনাঙ্করবাবুকে দান্তেওয়াড়ায় পাঠানো হয়।
[প্রসূতির পেটে অস্ত্রোপচারে নষ্ট গর্ভস্থ ভ্রুণ, গ্রেপ্তার হাতুড়ে চিকিৎসক]
বর্ধমানের এই শহিদের ভাই শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁরা চারভাই। দিনাঙ্করবাবু মেজো। একই চৌহদ্দিতে তাঁদের বাড়ি। ভাইপো দেবজিৎ বর্ধমানের সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। এদিন পরিবারের লোকজন তাকে আড়াল করেই রেখেছিলেন। পড়শিরা জানান, কথা বলার মতো অবস্থায় নেই দেবজিৎ। পড়শিরা জানান, দিনাঙ্করবাবু খুবই মিশুকে ছিলেন। মানুষ হিসেবেও বড় মনের মানুষ ছিলেন তিনি।
ছবি: মুকুলেসুর রহমান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.