ছবি: প্রতীকী
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘সুপারি কিলার’ বা ‘ভাড়াটে খুনি’ নয়। পুরুলিয়ার মফস্বল থানার কানালি গ্রামে সপুত্র পেট্রল পাম্প ম্যানেজার খুনের নেপথ্যে স্রেফ পথ ডাকাতি। আর এই পথ ডাকাতির অপারেশনে কোন বড়সড় ডাকাত দল নয়। একসময় পুরুলিয়ার (Purulia) পথ ডাকাতিতে যুক্ত থাকা ‘ফালিবাজে’র মতোই একেবারে সাধারণ অপরাধী। যাদের হামলায় বাড়ির ফেরার পথে বাবা মদন পাণ্ডে ও ছেলে কানাই পাণ্ডের জীবন শেষ হয়ে যায়।
গত ৯ জুলাই পুরুলিয়া মফস্বল থানার কানালি গ্রামের অদূরে ঘটনাটি ঘটে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সিআইডির সহায়তায় কানালি গ্রামের অদূরে ধানবাদ-জামশেদপুর ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রশস্তিকরণের কাজে টোল প্লাজায় ব্যবহৃত সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিআইডির ওসি ডিআরবিটি (ডাকাতি, রোবারি, বাগলারি, থেপ্ট) বিজয় কুমার যাদব ও টাওয়ার মোবাইল এক্সপার্ট কাঞ্চন দাসের তত্ত্বাবধানে পাঁচজনের দল পুরুলিয়া জেলা পুলিশকে তদন্তে সহায়তা করে ছ’দিনের মাথায় জোড়া খুনের কিনারা করল। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবা-ছেলের মোবাইল পাওয়া যায়নি। ধৃতরা নিহত বাবা ও ছেলের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা লুট করেছিল। কিন্তু সেই টাকা তারা খরচ করে ফেলে।
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম মাণ্ডিল বেদ, মনই বেদ, দীনেশ বেদ। মাণ্ডিল ও মনয় দুই ভাই। তাদের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে। গত শনিবার ঘটনার দিন আইমুণ্ডির কাছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের টোল প্লাজার সিসিটিভি ফুটেজে তিনজনের ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি ছিল ওইদিনের রাত ১০টা ১৫ মিনিটের। খুনের ঘটনা ঘটেছিল সাড়ে আটটা থেকে ন’টার মধ্যে বলেই সিআইডির অনুমান। তারপর তাদের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে শুক্রবার পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের চিত্তরঞ্জন এলাকার ঝাড়খণ্ড লাগোয়া চুরুলিয়া থেকে সিআইডি ও পুরুলিয়া জেলা পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার রাতে তাদেরকে মফস্বল থানায় নিয়ে আসা হয়। শনিবার তাদেরকে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হবে।
চুরুলিয়া এলাকায় ধৃতরা বানজারা সম্প্রদায়ের মতো ক্যাম্প করে থাকে। ধৃতরা সাপ নিয়ে খেলা দেখানোর সঙ্গেও যুক্ত। খুনের ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকেই তারা চাষমোড়ে ছিল। রীতিমতো রেইকি করে। তাদের ধারণা ছিল, ম্যানেজার বাড়ি যাওয়ার পথে টাকা নিয়ে যান। পেট্রল পাম্প ম্যানেজার, তার ছেলে ওই পাম্পের কর্মচারী ছাড়াও কানালি গ্রামের বাসিন্দা ব্যাংক মিত্র দীপেন মাহাতোও তাদের টার্গেটে ছিল। দীপেন মাহাতোকে লাঠি দিয়ে আঘাত করলেও সে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের টার্গেট মিস হয়ে যায়।
রেইকি করে ধৃতরা জেনেছিল, দীপেনের কাছে সব সময় একটি ল্যাপটপ ও প্রায় ৫০ হাজার মতো টাকা থাকত। এই খুনের অপারেশনের পর একজন লুট হওয়া মোটরবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়। বাকিরা পরের দিন অর্থাৎ ১০ জুলাই বাসে করে পুরুলিয়া এলাকা ছেড়ে আসানসোলে যায়। ছিনতাইয়ের জন্য এই খুনের অপারেশন নিয়ে ভীষণই উদ্বিগ্ন পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। কয়েকদিন ধরে এই জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় যেভাবে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা ঘটছে তাতে কি আবার অতীতের মতো ‘ফালিবাজের’ দৌরাত্ম্য ফিরে এল, এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.