সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: শুধুমাত্র নজরদারি বা কাউন্সেলিং নয়। এবার রাজ্যজুড়ে ‘ব্লু হোয়েল’ বা নীল তিমির দৌরাত্ম্য্য রুখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে পুরোপুরি তদন্তে নেমে পড়লেন সিআইডির গোয়েন্দা কর্তারা। নীল তিমির হানা আটকাতে গোয়েন্দা কর্তারা প্রয়োজন হলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রাশিয়ার পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে ভবানীভবন সূত্রে খবর। রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা শুক্রবার জানান,“সিআইডি এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। একইসঙ্গে এই সম্পর্কে সর্তক থাকার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকেও বার্তা পাঠানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, তদন্তের পাশাপাশি একটি বিশেষ কাউন্সেলিং টিমও তৈরি করে ফেলেছে সিঅাইডি। এই টিম পাঠানো হবে জেলায় জেলায়।”
[বারাসতের পর হুগলিতে ‘নীল তিমি’র থাবা, নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষা ছাত্রের]
নীল তিমির দৌরাত্ম্য শুরু হতেই পুরো বিষয়টির উপর কড়া নজরদারি রাখতে শুরু করেন সিঅাইডি ও লালবাজারের সাইবার সেলের গোয়েন্দারা। সিঅাইডির অতিরিক্ত ডিজি ডঃ রাজেশ কুমার জানান,“এখনও পর্যন্ত নীল তিমির কবলে পড়া এক ছাত্রের সন্ধান এসেছিল সিআইডির কাছে। সেই ছাত্রকে আমাদের গোয়েন্দারা কাউন্সেলিং করেন। কাউন্সেলিং করবার পর ওই ছাত্রকে পুরোপুরি সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়ে দিই আমরা। নজরদারি ও কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি এবার নীল তিমির বিষয়ে আমরা তদন্তও শুরু করেছি।”
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই কলকাতা লাগোয়া একটি কলেজের ছাত্রের মধ্যে নীল তিমির হদিশ পাওয়া যায়। ওই ছাত্রের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনায়। ওই ছাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের হস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করত। কিন্তু তার আচরণ দেখে সন্দেহ হয় কলেজের রেজিস্ট্রারের। ওই ছাত্র প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠত সকাল ছ’টা থেকে সাতটার মধ্যে। ঘুম থেকে উঠে পড়াশোনাতেই মজে থাকত সে। কিন্তু কয়েকদিন যাবৎ সে উঠত সকাল অাটটা থেকে ন’টায় উঠতে শুরু করে। পাশাপাশি অত্যন্ত মিশুকে ওই ছাত্র কয়েকদিনের মধ্যে গুম মেরে যায়। কারও সঙ্গেই মেলামেশা করত না। নিজের ঘরেই সর্বক্ষণ থাকত। ছাত্রের এমন আচরণ দেখেই কলেজের রেজিস্ট্রার সিআইডির গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানান। গোয়েন্দারা ফেসবুক ও হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে বন্ধু সেজে ওই ছাত্রের সঙ্গে গল্পগুজব করতে থাকেন। তাতেই গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই ছাত্র অষ্টম পর্যায় পর্যন্ত ওই ভয়ানক মারণ খেলা খেলে ব্লেড দিয়ে নিজের হাত কেটে নীল তিমির ছবিও এঁকে ফেলেছিল। তা জানতে পেরে গোয়েন্দারা ছাত্রের কাউন্সেলিং করতে শুরু করেন। তাতেই অাসে সাফল্য। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে ওই ছাত্র নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে জানায়,“নীল তিমি মোটেই অানন্দের খেলা নয়। অত্যন্ত ভয়ানক মারণ খেলা। এই খেলা থেকে সকলেই দূরে থাকুন।”
[জানেন, পুজোয় কী চমক অপেক্ষা করছে ‘গোয়েন্দা’ সারমেয়দের জন্য?]
নীল তিমির দৌরাত্ম্য রুখতে সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন তদন্তকারী গোয়েন্দারা। যেহেতু নীল তিমির দৌরাত্ম্য দেশজুড়ে, সেহেতু সমস্যার জট খুলতে সিঅাইডির গোয়েন্দারা দেশের প্রতিটি রাজ্যের পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলেছেন। তদন্তে মূলত দেখা হচ্ছে নীল তিমির উৎস স্থান। সিআইডির এক কর্তা জানান, “উৎসস্থান চিহ্নিত করতে পারলেই নীল তিমির দৌরাত্ম্য পুরোপুরিভাবে আটকানো যাবে। তবেই ব্যবস্থা নেওয়া যাবে মূল মাথাদের বিরুদ্ধে এর জন্য প্রয়োজন হলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রাশিয়া প্রশাসনের সঙ্গে অামরা যোগাযোগ করে তদন্তে সাহায্য চাওয়া হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.