বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: ‘ওনাকে আমরা আগে থেকেই চিনতাম। শ্রদ্ধা করতাম। ভালবাসতাম। সিনেমায় ওনার অভিনয় দেখে আমরা বহুবার মুগ্ধ হয়েছি। তবে আমাদের গ্রামে দাঁড়িয়ে যে কথা ওনার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল, তা আমরা এখন কেউই মনে রাখিনি। আমরা চাই, ওনার আত্মার শান্তি হোক। উনি যেখানেই থাকুন, শান্তিতে থাকুন ভাল থাকুন।’ মঙ্গলবার দুপুরে কথাগুলি বলছিলেন নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার চৌমাহা গ্রামের বাসিন্দা মফিজুর রহমান।
শুধু মফিজুরবাবুই নন, চৌমাথা গ্রামের প্রত্যেকটা মানুষেরই প্রায় একই বক্তব্য। তারা কেউই আর ওই কথা নিয়ে এতটুকু রেগে নেই। বরং তাদের বক্তব্য, ‘হয়তো কোনও একটি পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে উত্তেজনাবশত উনি বলে ফেলেছিলেন ওই কথা। যা হয়তো আমাদের কিছু সময়ের জন্য খারাপ লেগেছিল। কিন্তু সেই কথা আমরা আর মনে রাখিনি। কারণ, আমরা জানি, উনি অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন। উত্তেজনাবশত কারও মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়া ওই কথা মাথায় রাখা উচিত নয়।’ চৌমাহা গ্রামে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দা তোহার মল্লিক জানিয়েছেন, ‘উনি সাংসদ হিসাবে অনেক কাজ করেছেন কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে। ভুলবশত হয়তো উনি ওই কথা বলে ফেলেছিলেন। সেই কথা আমরা এখনও কেন মনে রাখব? বরং এই বয়সেই ওনার চলে যাওয়ার খবর শুনে খুবই খারাপ লাগছে।’
কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয়বার বিপুল ভোটে জেতার পর এই চৌমাহা গ্রামের এক জনসভায় সাংসদ তাপস পালের মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া একটি কথা, ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব…’, রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছিল। অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল ‘দাদার কীর্তি’র তাপস পালকে। যদিও এরপরে বেরিয়ে গিয়েছে অনেক সময়। সাংসদ থাকাকালীন প্রায় আড়াই বছর কৃষ্ণনগরে আসেননি তাপস পাল। অবশ্য চৌমাহা গ্রামের মানুষ তাপস পালকে ক্ষমা করে দিয়েছেন অনেক আগেই। তারা আর মনে রাখেননি সেকথা। বরং মঙ্গলবার সকালে তাপস পালের মৃত্যু সংবাদ চৌমাহা গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছাতে শোকস্তব্ধ অনেকেই। তাঁরা সবাই তাপস পালের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।
২০০৯ সালে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর তাপস পাল এসেছিলেন কৃষ্ণনগর পুরসভায়। প্রিয় নায়ককে দেখার জন্য উপচে পড়েছিল ভিড়। যদিও রাজনীতির মাঠে তিনি অনেক আগেই পা দিয়েছিলেন। ততদিনে তিনি দু’বারের বিধায়ক। প্রথমবারেই কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জেতার পর নিজের কেন্দ্রের প্রচুর উন্নয়ন কাজ করে মানুষের প্রবল জনসমর্থন পেয়েছিলেন। আর তাই, দ্বিতীয়বারও যে তিনিই জিতবেন, সেই অগাধ বিশ্বাস ছিল তাঁর। চষে বেরিয়েছিলেন নিজের কেন্দ্রের প্রায় প্রতিটি কোণ। জিতেওছিলেন ভালভাবেই। অথচ চৌমাহা গ্রামের জনসভার ওই কথা রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছিল। অবশ্য সেই কথা ভুলে গিয়ে তাঁর মৃত্যুসংবাদ কৃষ্ণনগরের মানুষকে শোকের আবহে দাঁড় করিয়েছে।
কৃষ্ণনগরে এলেই থাকতেন খোকা বোসের বাড়িতে। খোকাবাবু জানিয়েছেন, ‘তাপস আমাকে দাদার মত সন্মান করত। রোজ প্রণাম করে প্রচারে যেত। ২০০৯-‘১৪ সাল অবধি আমার বাড়িতে এসে থাকত। মাঝে দেড় বছর আসেনি। একজন দক্ষ রাজনৈতিক ছিল তাপস।’ যে কথা তাপস পালকে সমালোচনার মধ্যে ফেলেছিল, সেই কথা মনে রাখেনি আর কৃষ্ণনগরের মানুষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.