শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় ফুঁসছে চোপড়া। রবিবার থেকে বিক্ষোভ, প্রতিবাদে থমথমে গোটা এলাকা। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ছবিটা ছিল একইরকম। তবে সন্ধেয় ওই ঘটনা নিল নয়া মোড়। নিহত কিশোরীর বাবা, দাদা, কাকা-সহ পরিবারের মোট পাঁচজনকে আটক করল পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেই জানিয়েছে পুলিশ। যদিও আটক করার প্রতিবাদে চোপড়া থানার সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের দাবি, ঘটনা অন্যদিকে ঘোরাতেই ‘অন্যায়’ভাবে কিশোরীর পরিজনদের আটক করা হল। বিজেপি জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ি বলেন, “পুলিশ বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিজেপি কর্মীদের উপর অত্যাচার করছে।”
রবিবার ভোরে বাড়ির পাশেই শৌচালয়ে যায় চোপড়াগজের বিজেপি বুথ সভাপতির বোন। অভিযোগ, ফেরার পথে বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে অপহরণ করে। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে সোনারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চোপড়াগজের কাছে একটি ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় কিশোরীকে। সেখানেই তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। এরপর বিষ খাইয়ে খুনের চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ। ওই ফাঁকা জায়গায় অসুস্থ কিশোরীকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ইতিমধ্যেই ছাত্রীর খোঁজখবর করা শুরু হয়। কোথায় গেল সে, তা জানতে এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে হানা দেন স্থানীয়রা। বেশ কিছুক্ষণ পর ওই ফাঁকা জায়গা থেকে অচৈতন্য অবস্থায় কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। প্রথমে তাকে চোপড়ার দলুয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। সেখানেই মৃত্যু হয় তার।
অপহরণ করে ধর্ষণের পর ওই কিশোরীকে খুন করা হয়েছে বলেই অভিযোগ করে নিহতের পরিবার। ঘটনায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা। তারই প্রতিবাদে রবিবার প্রায় রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় চোপড়া। সেই রেশ ছিল সোমবারও। এদিন কিশোরীর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সামনে আসে। যদিও পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, ধর্ষণ নয়। বিষক্রিয়াতেও মৃত্যু হয়েছে ওই স্কুলছাত্রীর। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট মানতে নারাজ তাঁর পরিজনেরা। এরপরই মিছিল করে দেহ সৎকার করতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই মিছিলে ছিলেন নিশীথ প্রামাণিক-সহ রাজ্য বিজেপির একাধিক নেতৃত্ব। যদিও মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। তা নিয়ে বিক্ষোভও দেখায় গেরুয়া শিবির।
দেহ সৎকার করে বাড়িতে ফিরে আসার পরই নিহতের বাবার সঙ্গে দেখা করে তৃণমূল নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রী গৌতম দেব, গোলাম রব্বানি, মৌসম বেনজির নূর এবং জেলা তৃণমূল সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল কিশোরীর বাড়িতে যান। ঠিক তারপরই কিশোরীর বাবা, দাদা, কাকা-সহ পরিবারের ৫ জনকে আটক করে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.