বিক্রম রায়, কোচবিহার: ট্রেনের কোচের গদি আঁটা আসনে গা এলিয়ে দিয়ে খোসমেজাজে ফোনে মায়ের সঙ্গে গল্প করছিলেন ছেলে। বলছিলেন, আর খানিকক্ষণ পরই পৌঁছে যাবেন বাড়ি। অনেকদিন পর ছেলেকে দেখার আশায় বুক বেঁধেছিলেন মা। কিন্তু কথা বলতে বলতেই চিরঞ্জিৎ বর্মনের কানে আসে বিকট শব্দ। ছেলের গলার স্বর আর ঠিক মতো আসে না মায়ের কানে। তারপরই টিভির পর্দায় ভেসে ওঠে সেই অপ্রত্যাশিত খবর। ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে বিকানের এক্সপ্রেস। আর তাতেই চিরঞ্জিৎতে চিরতরে হারাল পরিবার।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ ময়নাগুড়ির দোমোহানি এলাকায় লাইনচ্যুত হয় গুয়াহাটিগামী আপ বিকানের এক্সপ্রেস (Maynaguri Train Accident)। লাফিয়ে একটি কামরা উঠে যায় অন্যটির উপর। দুমড়ে-মুচড়ে যায় ট্রেনটির ১২টি বগি। স্থানীয় সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত যে ন’জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে তাতে, তার মধ্যে ছিলেন কোচবিহারের দুই যাত্রীও। জয়পুর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন সুভাষ রায়। এদিকে ভিনরাজ্যে অর্থ উপার্জনে গিয়ে আর বাড়ি ফেরা হল না চিরঞ্জিৎ বর্মনেরও।
জানা গিয়েছে, কোতওয়ালি জেলার চাঁদমারির বাসিন্দা ছিলেন বছর তেইশের চিরঞ্জিৎ। মাস কয়েক আগেই গল ব্লাডারে স্টোন ধরা পড়েছিল তাঁর। জলপাইগুড়ির হাসপাতালগুলো জানিয়েছিল, অস্ত্রোপচারে খরচ অন্তত ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু পরিবারের যা অবস্থা, তাতে ওই পরিমাণ অর্থ চিকিৎসার জন্য খরচ করা কঠিন। তাই ঠিক করেন ভিনরাজ্যে গিয়ে রোজগার করবেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। মাস চার-পাঁচেক আগেই অন্য রাজ্যে চলে গিয়েছিলেন। প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করে শেষমেশ ফিরছিলেন বাড়ি। কিন্তু ফেরা আর হল কই! গন্তব্য আসার আগেই মায়ের গলার আওয়াজকে সঙ্গী করেই চিরবিদায় নিলেন চিরঞ্জিৎ।
“ছেলের সঙ্গে তখন কথা বলছিলাম। ফোনে থাকাকালীনই বিকট একটা শব্দ কানে এল। তারপর ফোনটা মনে হল কেটে গেল। আর কোনও আওয়াজ পেলাম না।” ডুকরে কেঁদে উঠলেন চিরঞ্জিতের মা। আপাতত ছেলের দেহ শনাক্ত করার গুরু দায়িত্ব পালন করছেন শোকস্তব্ধ মা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.