দেবাদৃতা মণ্ডল, চুঁচুড়া: গৃহবধূর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল চুঁচুড়া। দিনের পর দিন মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার। সেসব সহ্য করেই শ্বশুরবাড়িতে থেকে গিয়েছিলেন গৃহবধূ মধুমিতা চট্টোপাধ্যায়। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সেই ইচ্ছে ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। এযাত্রায় প্রাণে বাঁচলেও শেষপর্যন্ত পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হল মধুমিতাদেবীর। এদিকে বউমার মৃত্যুর খবর শ্বশুরবাড়ির লোকজন চুঁচুড়ার কনকশালী এলাকায় মধুমিতাদেবীর বাপের বাড়িতে পৌঁছালে ক্ষোভে ফেটে পড়ে উত্তেজিত জনতা। মৃতের স্বামী ও অন্যান্যদের বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে পুলিশ এসে আক্রান্তদের উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের দাবি, শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারেই মধুমিতা চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়েছে। বছর সাতেক আগে চুঁচুড়ার কনকশালীর মধুমিতার সঙ্গে স্থানীয় সাহাগঞ্জের তমাল চট্টোপাধ্যায়ের বিয়ে হয়। তাঁদের এক বছরের সন্তানও রয়েছে। মৃতার আত্মীয়দের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিভিন্ন আছিলায় মধুমিতার উপরে অত্যাচার করত। বিয়ের পরই মধুমিতার বাবা মা মারা যান। কনকশালী এলাকায় তাঁদের কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। সেই সম্পত্তিও শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাদের নামে লিখিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি স্বামী তমাল ফের বিয়ে করেন। সেই খবর শোনার পর থেকেই অবসাদে ভুগছিলেন মধুমিতা। শেষপর্যন্ত মানসিক শান্তির জন্যই সাহাগঞ্জের শ্বশুরবাড়ি থেকে কনকশালীতে চলে আসেন।
পেশায় কল্যাণীর একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষিকা ওই গৃহবধূ কিছুদিন আগেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের খবরে অবসাদে ভুগতে থাকেন। একটা সময় পর অবসাদ কাটাতেই ফের স্কুলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। সেইমতো গত মঙ্গলবার স্কুলে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে টোটো থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হলে তাঁকে কল্যাণীর গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বৃহস্পতিবার সেখানেই মধুমিতার মৃত্যু হয়। সেই খবর কনকশালীতে পৌঁছাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের আত্মীয়রা। মধুমিতাদেবীর এই মর্মান্তিক পরিণতির জন্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকেই দায়ী করতে থাকেন। এরপর মধুমিতার শ্বশুরবাড়ির লোকজন কনকশালী পৌঁছালে তাদের বেধড়ক মারধর করে উত্তেজিত জনতা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। মৃতের আত্মীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে মধুমিতাদেবীর স্বামী, শ্বশুর ও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.