গ্রাফিক্স: অরিত্র দেব।
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: ‘ব’ এ বোমা ও বীরভূম । দুটোই সমার্থক হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেই বোমা তৈরিতে বীরভূমে ঢুকছে বোমা তৈরির নতুন রসদ ‘চায়না বারুদ’। ভোটের মুখে যাকে রোখা জেলা পুলিশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
মুর্শিদাবাদ ও ঝাড়খন্ড থেকে এই বারুদ ইতিমধ্যে জেলার বেশ কয়েক জায়গায় মজুতের আশঙ্কা করছে পুলিশ। ক্যুরিয়ার সার্ভিস বা বাসের চালকের হাত দিয়ে সাধারণ পণ্য পাঠানোর মতন সেগুলি ঠিকানায় চলে যাচ্ছে। সেই বারুদ ব্যবহারে রীতিমতন অভ্যস্থ হয়ে উঠেছে জেলার বোমারুরা। কারণ সিউড়ি থেকে দুলাল দলুইয়ে গ্রেপ্তারের পরে তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হল প্যাকিং করা এই ‘চায়না বারুদ’। জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ন মুখোপাধ্যায় জানান, “সিউড়িতে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের পরেই আমরা প্রথম এই বারুদের সন্ধান পেলাম। আমাদের লাগাতার তল্লাশির ফল এই বারুদ উদ্ধার।”
ফের মল্লারপুরে সোমবার সকালে তিন ড্রাম ভর্ত্তি বোমা উদ্ধার হয়। তবে চায়না বারুদের সন্ধান মেলে লাভপুরের হাতিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া শেখ আব্বাসউদ্দিনের ফোনের সূত্র ধরে। তাঁর ফোনবুকেই ছিল সিউড়ির বিজেপি কর্মী দুলালের নাম। যে নাকি বারবার আপত্তি করছিল তাঁকে দেওয়া এবারের ‘চায়না বারুদে’র মান খুব খারাপ। সেই সূত্রে সিউড়ি থানার পুলিশ ক্রেতা সেজে নতুনপল্লি থেকে দুলালকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছে পাওয়া যায় কিছু বারুদ। পরে তাঁকে নিয়ে তাঁর তিলপাড়ার বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে বাড়ির পিছনের ইটের গাদা ও নতুন বাড়ির ভিতর থেকে প্রচুর পরিমান ‘চায়না বারুদ’ বাজেয়াপ্ত করে। তার পর থেকে তল্লাশি বাড়িয়েছে পুলিশ।
এতদিন দেশি লাল ও কালো বারুদের সঙ্গে গন্ধক মিশিয়ে জেলা জুড়ে বোমা শিল্প চলত। কিন্তু ‘চায়না বারুদ’ আসায় বোমা কারিগরেরা যেন হাতে চাঁদ পেয়েছে। দেখতে সাদা, চকচকে রুপোলি রঙের। যা সরাসরি চায়না থেকে উত্তরপ্রদেশ ঘুরে মুর্শিদাবাদ ও ঝাড়খন্ড দুটি দিক থেকে জেলায় ঢুকছে। চায়না বারুদের দাম দেশি বারুদের থেকে অনেক কম। ফলে বোমা বিক্রি করে লাভ বেশি। বোমা বাঁধার সময় ঝুঁকি কম। সহজে ফাটে না। বোমা বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন চায়না বারুদে ফসফরাসের পরিমাণ বেশি থাকায় বোমার ঝলকানি বেশি হয়, শব্দ দেশি বোমার থেকে দ্বিগুণ হয়।
উল্লেখ্য গত একমাসে জেলা জুড়ে প্রায় হাজার খানেক বোমা উদ্ধার করেছে জেলার সব থানা। সেগুলি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে প্রথম সিআইডির বোমা বিশেষজ্ঞদের নজরে আসে বোমার এই পরিবর্তন। তার পরে গত ৬ মার্চ লাভপুরের হাতিয়া গ্রামে বড়সড় অস্ত্র তৈরির কারখানা মেলে। সেখানেই প্রথম চায়না বারুদের হদিশ দেখে পুলিশ। কারখানা তৈরির উদ্যোক্তা আব্বাসুদ্দিনের গ্রেপ্তারের পরেই তারই সূত্র ধরে সিউড়িতে বিজেপির এই কর্মীর হদিশ। লোকসভা নির্বাচনের আগে একটা বোম স্কোয়াড বিজেপি তৈরি করছিল বলে তৃণমূলের অভিযোগ। আর চায়না বারুদের ব্যবসা তার নিজের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল। জেলা পুলিশের দুটি দল মুর্শিদাবাদের জলঙ্গী ও ঝাড়খন্ডের একটি এলাকায় বিশেষ খোঁজ নিচ্ছে। সেখান থেকে কখনও পার্সেল করে বাসের চালককে দিয়ে বা সাদ্গারণ মাল হিসাবে প্যাকিং করে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঢুকছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.