ছবি: জয়ন্ত দাস।
ধীমান রায়, কাটোয়া: থাকার উপযুক্ত ঘর নেই। আর সেই ঘর তৈরির জন্য নিজের শিশুপুত্রকে বিহারের (Bihar) এক দম্পতির কাছে দেড় লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিলেন মা-বাবা! পশ্চিম বর্ধমান জেলার উখড়ার বাসিন্দা এক দম্পতির কাণ্ডে শোরগোল। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁদের। বিষয়টি গোপনেই ছিল। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করার সময়ই বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। স্থানীয়রা কয়েকজন তাঁদের কথোপকথন শুনেই পুলিশকে জানান। ভিনরাজ্যে শিশু পাচারের অভিযোগে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া (Katwa) থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে চারজনকে। উদ্ধার করা হয় ছ’মাসের শিশুটিকেও।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের নাম বুনি বাউড়ি, অচিন্ত্য সরকার, সুভাষ পণ্ডিত এবং চম্পাদেবী। বুনি বাউড়ির দ্বিতীয় স্বামী অচিন্ত্য। প্রায় ১২ বছর আগে প্রথম স্বামী ফড়িং বাউড়িকে ছেড়ে দিয়ে অচিন্ত্যকে বিয়ে করেন বুনি। তাঁরা পশ্চিম বর্ধমান জেলার উখড়া থানার আনন্দপল্লি এলাকার বাসিন্দা। সুভাষ পণ্ডিত ও চম্পাদেবী স্বামী-স্ত্রী। তাঁদের বাড়ি বিহারের ভাগলপুর জেলার বিনপুর থানা এলাকায়। তবে কর্মসূত্রে উখড়ায় থাকেন বিহারের ওই দম্পতি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২ দিন আগে সুভাষ পণ্ডিতের কাছেই বুনি বাউড়ি ও তার স্বামী অচিন্ত্য নিজের সন্তানকে দেড় লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেয়। ধৃতদের মঙ্গলবার কাটোয়া মহকুমা আদালতে তোলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
বিষয়টি কীভাবে প্রকাশ্যে এল? কাটোয়া রেল স্টেশনের পাশে ১৪ কুঠুরিপাড়ায় বুনি বাউড়ি ও তার স্বামী অচিন্ত্যর মধ্যে সোমবার বিকেলে কোনও বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বচসা বাধে। সেসময় তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করছিল ৫ বছরের ছেলে। জানা যায়, সন্তান বিক্রির বেশ কিছু টাকা অচিন্ত্য নেশার পিছনে খরচ করায় তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলা হয়। তখন অচিন্ত্য ও বুনির বাগবিতণ্ডার মাঝে প্রকাশ হয়ে যায় নিজেদের সন্তানকে দেড় লক্ষ টাকায় বিক্রির (Sold) কথা। আশপাশের লোকজন তা শোনার পরেই পুলিশকে জানান।
পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫ বছরের সন্তান-সহ দু’জনকে আটক করে আনে। জিজ্ঞাসাবাদ করতেই দু’জনে স্বীকার করে যে অভাবের তাড়নায় তারা দেড় লক্ষ টাকায় নিজেদের ছ’ মাসের সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছে। বুনি সর্দারের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ৮৯ হাজার টাকা। এরপরেই দু’জনকে জেরা করে সুভাষ পণ্ডিতের নাম জানতে পারে পুলিশ। কাটোয়া থানার পুলিশ উখড়ায় হানা দিয়ে সুভাষ পণ্ডিত ও চম্পাদেবীর কাছ থেকে ছয় মাসের শিশুটিকে উদ্ধার করে। দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা গিয়েছে ধৃত অচিন্ত্য সরকারের বাড়ি কাটোয়ার পলসোনায়। বেশ কয়েকবছর আগে উখড়া এলাকায় গিয়ে তিনি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তখন সেখানেই বুনি সর্দারের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। পরিচয় থেকে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হয়। এদিকে বুনি সর্দার ও তার প্রথম স্বামী ফড়িং নিঃসন্তান ছিলেন। অচিন্ত্যর সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়ার পর ফড়িংকে ছেড়ে তাকে বিয়ে করেন বুনি। দুই পুত্রসন্তান হয় তাদের। অচিন্ত্য একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করেন। বুনি সর্দারও পরিচারিকার কাজ করেন বলে জানা গিয়েছে। ১২ দিন আগে তারা তাদের ছয় মাসের সন্তানটিকে বিক্রি করে দেন পরিচিত সুভাষ পণ্ডিত চম্পাদেবীর কাছে।
বুনি সর্দারের দাবি, “আমাদের বসবাসের ঠিকমতো ঘর নেই। অভাবের তাড়নায় ঘর তৈরির জন্য ছেলেকে বিক্রি করেছি। এখন কষ্ট হচ্ছে। টাকা চাই না। ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।” অন্যদিকে ধৃত চম্পাদেবী সুভাষবাবুর প্রায় ২৭ বছর বিয়ে হলেও তারা নিঃসন্তান বলে জানা গিয়েছে। চম্পাদেবীর দাবি,”আমি টাকা দিয়ে ছেলে কিনিনি। ওরা বাচ্চাটিকে কোথাও ফেলে আসার কথা বলছিল। তখন আমরা নিজেদের কাছে রেখে লালনপালন করার প্রস্তাব দিই। ওরা রাজি হয়ে গেলে ছেলেটিকে নিজের সন্তানের মতোই নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছিলাম।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার অচিন্ত্য ও বুনি উখড়া থেকে পলসোনা গ্রামে পালিয়ে আসার পথেই কাটোয়া থেকে তাদের আটক করা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.