সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: কুয়োতে ছোট্ট মেয়েক দেহ, রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে টাকা। দুর্গাপুরের (Durgapur) পাণ্ডবেশ্বর এলাকায় এমন নৃশংস ঘটনায় থ পরিবার! ৬ বছরের মেয়েকে এভাবে হারানোর ধাক্কা সামলে তাঁদের প্রাথমিক সন্দেহ, চুরি করতে এসেছিল দুষ্কৃতীরা। ছোট্ট মেয়ে সেই চুরির ঘটনা দেখে ফেলায় তাকে খুন করা হয়েছে। ঘটনায় গাঢ় হয়েছে রহস্য। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
সোমবার রাত দশটা নাগাদ পাণ্ডবেশ্বর বৈদ্যনাথপুর পঞ্চায়েতের কোন্দা গ্রামের উপর পাড়ার বাসিন্দা পেশায় পোস্ট অফিস এজেন্ট (Post Office agent) বাপি গোস্বামীর বাড়ির কুয়ো থেকে উদ্ধার হয় তাঁর মেয়ে মিষ্টি গোস্বামীর মৃতদেহ। মিষ্টির বয়স ৬ বছর। রাস্তাতে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় পাওয়া যায় দেড় হাজার হাজার টাকা। পরিবারের সন্দেহ, এটি চুরির ঘটনা। চুরি দেখে ফেলে ছোট্ট মিষ্টি। তাই ধরা পড়ার ভয়েই চোরেরা মেয়েকে কুয়োর মধ্যে ফেলে দেয় বলে পরিবারের অভিযোগ।
বাপিবাবু জানান, “রাতে কালী প্রতিমার বিসর্জন দেখতে বালিজুরি গ্রামে গিয়েছিলাম। স্ত্রী ৬ বছরের মেয়ে ছাড়াও সেই সময় বাড়িতে ছিলেন আমার বৃদ্ধ বাবা-মা। বিসর্জন দেখে বাড়ি ফেরার পথে খবর পাই, বাড়িতে চুরি হয়েছে, মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়ি ফিরে দেখি আলমারি খোলা, বাড়ির জিনিসপত্র সব ছড়ানো। আলমারিতে রাখা গ্রাহকদের পোস্ট অফিসের পাশ বই, টাকাপয়সা লোপাট। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আমার মেয়েকে।”
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে জড়ো হন প্রতিবেশীরা। রাতেই সেখানে যান এলাকার বিধায়ক (TMC MLA) নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। শুরু হয় মেয়ের খোঁজে তল্লাশি। দেখা যায়, বাড়ির সামনের রাস্তায় পড়ে রয়েছে পোস্ট অফিসের পাশ বই, টাকার। বাড়ির উঠোনে কুয়োয় উঁকি দিতেই দেখা যায় মেয়ের দেহ। খবর দেওয়া হয় দমকলে, ঘটনাস্থলে আসে পাণ্ডবেশ্বর থানার পুলিশ। কুয়ো থেকে মিষ্টির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
মেয়ের দেহ দেখে স্বভাবতই কেঁদে আকুল বাপিবাবুর স্ত্রী। কান্নার বেগ সামলে ঝুমা দেবী জানান, “স্বামী কালী বিসর্জন দেখতে বাইরে গিয়েছিলেন। বৃদ্ধ শ্বশুর, শাশুড়ি আর মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ছিলাম। আমরা সকলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ লক্ষ্য করি, মেয়ে নেই। সম্ভবত চুরি করতে চোরেরা ঘরে ঢুকেছিল। মেয়ে তাদের চিনে ফেলেছিল। ধরা পড়ার ভয়েই হয়তো চোরেরা মেয়েকে কুয়োতে ফেলে দেয়।”
বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বক্তব্য, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা। পুলিশকে অনুরোধ করেছি, তদন্ত করে দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করার জন্য।” অন্যদিকে ঘটনাটি ঘিরে তৈরি হয়েছে গভীর রহস্য। বাড়িতে চোর ঢুকল, অথচ বাড়ির লোকেরা কেউ তা টের পেল না? ঘটনাটি যদি চুরির হয় তাহলে চোরেরা কেন টাকা ফেলে কেন পালাল? ঘরে ২০ হাজার টাকা ছিল। এর মধ্যে চোরেরা দেড় হাজার টাকা ফেলেও গিয়েছে। তাহলে কি চুরির উদ্দেশ্য ছিল নাকি অন্য কিছু? এই প্রশ্নগুলি ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি (পূর্ব) কুমার গৌতম জানান, “সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.