ধীমান রায়, কাটোয়া: কোমর থেকে পা পর্যন্ত অংশ কোলে নিয়ে বসে দাদু। আর শরীরের বাকি অংশ পড়ে পিসির কোলে। দুর্ঘটনায় শরীরটা দুই খণ্ড হয়ে যাওয়ার পরেও শিশুটি তখনও বলছে,”আমি ঠাকুরমার কাছে যাব। আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে চলো।” আর ওই অবস্থায় শিশুটিকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনার পরেই দাদু,পিসির আর্ত চিৎকার,”ডাক্তারবাবু আমাদের চন্দনকে তাড়াতাড়ি সেলাই করে দিন। ওর কিছু হবে না। এখনও কথা বলছে।” বস্তুত এই দৃশ্য দেখে চিকিৎসক, নার্সরাও হতভম্ব। মর্মান্তিক এই দৃশ্য দেখার পর তাঁদের চোখের জলও আটকায়নি। তবে চিকিৎসকরা আর তেমন সুযোগ পাননি। জরুরি বিভাগে আনার পরেই কার্যত নিস্তেজ হয়ে যায় শিশুটি।
বুধবার বিকেলে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার অগ্রদ্বীপে খড়বোঝাই মোটরচালিত ভ্যানের চাকায় দুই টুকরো হয়ে যায় ৫ বছরের শিশু। পুলিশ জানায় মৃতের নাম চন্দন হালদার। অগ্রদ্বীপ গোপীনাথ তলার কাছে তার বাড়ি। অগ্রদ্বীপ ঘাট থেকে বেথুয়াডরি রোডে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ওই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
অগ্রদ্বীপ গোপীনাথতলার বাসিন্দা আদিত্য হালদার ও চম্পা হালদারের দুই ছেলের মধ্যে ছোট চন্দন। আদিত্যবাবু মৎস্যজীবী। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ঠাকুরমা পারুলদেবীর সঙ্গে প্রতিবেশী একটি বাড়িতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গিয়েছিল চন্দন। সেখান থেকে ঠাকুরমার হাত ধরে হেঁটে হেঁটে ফিরে আসছিল। তখন একটি খড়বোঝাই মোটরচালিত ভ্যান নদিয়া মুখে যাওয়ার সময় শিশুটিকে প্রথম ধাক্কা দেয়। ঠাকুরমার হাত থেকে মুহূর্তের মধ্যে ছিটকে যায় চন্দন। তারপরেই মোটরচালিত ভ্যানের চাকা চলে যায় শিশুটির পেটের উপর দিয়ে। দুই টুকরো হয়ে যায় দেহ। কাছাকাছি অগ্রদ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ি। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকর্মীরা ছুটে আসেন। ততক্ষণে পালিয়ে যায় মোটরচালিত ভ্যানের চালক। পুলিশ তড়িঘড়ি শিশুটির শরীরের দু’ভাগ উদ্ধার করে চিকিৎসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
শিশুর সম্পর্কে দাদু অর্জুন হালদার ও পিসি আদুরি হালদার দুজনে মিলে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে আসেন চন্দনকে। ভাগীরথী পেরিয়ে কাটোয়া হাসপাতালে আসতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লেগে যায়। সঙ্গে থাকা এক সিভিক ভলেন্টিয়ার সুধাময় দত্তর কথায়,” এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখা যায় না। ঘটনাস্থল থেকে গাড়িতে চাপানোর সময় থেকে কাটোয়া হাসপাতালের গেট পর্যন্ত সময় ধরে ছেলেটা কথা বলেছে। কিন্তু জরুরি বিভাগে ঢোকানো মাত্রই কথা বন্ধ হয়ে যায়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.