দীবেন্দু মজুমদার, হুগলি: ফের চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসা ও অমানবিক আচরণে শিশুমৃত্যুর অভিযোগ উঠল কলকাতার বেসকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে৷ এবার কাঠগড়ায় রাজারহাট-নিউটাউনের টাটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল৷ মৃত শিশুর নাম প্রিয়জিৎ দত্ত৷ বিচারের আশায় বৃহস্পতিবার সন্তানহারা বাবা-মা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেল কাউন্সিলে, ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর ও ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিসমেন্ট রেগুলারিটি কমিশনে৷
[‘বৃদ্ধ’ যানের চলাচল রুখতে শহরের ৫০টি প্রবেশদ্বারে বসছে বিশেষ নজরদারি]
২০১৫-র আগষ্ট মাসে ব্ল্যাড ক্যানসারে ধার পড়ে হুগলির বাসিন্দা প্রিয়জিৎ দত্তের৷ ছেলেকে সুস্থ করার আশায় দিশেহারা বাবা-মা ছুটে আসেন কলকাতার টাটা মেডিক্যাল কলেজে৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের জানায়, আড়াই বছরের চিকিৎসায় প্রিয়জিৎকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে ব্যয় হবে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। মৃত শিশুর মা পাপিয়া দত্ত জানান, ইতিমধ্যে তাদের খরচ হয়ে গিয়েছে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ টাকা৷ যার মধ্যে তাঁরা ৭০ হাজার টাকা পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর তহবিল থেকে৷ তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগেই প্রচণ্ড মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয় প্রিয়জিতের। চোখে ঝাপসা দেখতে থাকে সে৷ ফলে তাকে আবার নিয়ে আসা হয় টাটা মেডিকেল কলেজে৷ পরিবারের অভিযোগ, তাদের অনুরোধ সত্ত্বেও কোনেও পরীক্ষা করা হয়নি প্রিয়জিতের৷ বরং স্পাইনাল কর্ডে দেওয়া হয় ইঞ্জেকশান৷ টানা আট সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে এই ইঞ্জেকশন৷ কিন্তু মেলেনি কোনও সুরাহা৷ এরপরেই হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁদের জানায়, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে প্রিয়জিতের৷ যার আনুমানিক খরচ পড়বে ৩০ লাখ টাকা৷ মৃত রোগীর বাবা রঞ্জিত দত্তর অভিযোগ, শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য তাঁর ছেলের চিকিৎসা ঠিকমতো করেননি টাটা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা। উলটে তাঁদের অসুস্থ ছেলেকে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে আইসিইউতে ভরতি করতে বলে৷
[৩৮ বছরের সহবাস ভোলার নয়, বাতিল ‘দিল’-এ মন কেমন করে দিলচাঁদের]
এরপর অসুস্থ প্রিয়জিৎকে তার পরিবার নিয়ে যায় কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে৷ এমআরআই করে সেখানকার চিকিৎসকরা জানায় ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় তার মাথায় মারাত্মক সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে। মৃত্যুপথযাত্রী ছেলেকে নিয়ে বহু হাসপাতালে ঘুরলেও আইসিইউ-তে ভরতি করতে পারেননি বাবা-মা৷ শেষে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ফর্টিস হাসপাতাল৷ মৃত শিশুর বাবা রঞ্জিত দত্ত জানান, সেই রাতে আইসিইউতে রেখে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে তাঁরা চিকিৎসা করেন প্রিয়জিতের। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি, ২০ মে রবিবার মারা যায় চার বছর আট মাসের প্রিয়জিৎ দত্ত৷ এরপরেই টাটা মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দাবি তোলেন মৃতে পরিবারের লোকেরা৷ অভিযোগ দায়ের করা হয়, ক্রেতা সুরক্ষা আদালত, ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেল কাউন্সিলে ও ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিসমেন্ট রেগুলারিটি কমিশনে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.