সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: আকাশপথে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত নামখানা, কাকদ্বীপ, বকখালি পরিদর্শন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে তুলে ধরলেন ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান। জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের তৎপরতায় ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়েছে বলে দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রবিবারই টুইটে জানিয়েছিলেন বুলবুল বিধ্বস্ত কাকদ্বীপ, নামখানা সফরে যাবেন তিনি। সোমবার সকালেই ওই এলাকায় যান তিনি। আকাশপথে বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। হেলিকপ্টারে বসে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট খতিয়ে দেখেন তিনি।
এরপরই প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান তুলে ধরেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বহু এলাকা প্রায় ভেসে গিয়েছে। ৮৫০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ঝড়ে ৩৪টি সাবস্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত। প্রায় ২ লক্ষেরও বেশি কাঁচাবাড়ি ভেঙে গিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ১ জন করে মোট দু’জন এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ৫জনের প্রাণহানি হয়েছে। তবে প্রশাসনের সতর্কবার্তা মেনে চললে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় একজনেরও প্রাণহানি হত না। নিহতদের পরিবারের হাতে দু’লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বুলবুলের দাপটে ফ্রেজারগঞ্জের পাতিবুনিয়ায় ট্রলারডুবি হয়ে একজন মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়। আরও ৮ জন মৎস্যজীবী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। প্রশাসনের বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও কেন ওইখানে ছিলেন মৎস্যজীবীরা? আসলে ওখানে ওদেরকে দিয়ে মাছ শুকানোর ব্যবসা চলছিল, এটা ঠিক নয়।” নিহত সঞ্জয় দাসের স্ত্রীর হাতে এদিন ২ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের তৎপরতায় ক্ষতি অনেকাংশেই কমানো গিয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি। সরকারি আধিকারিকদের কাজের প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
জেলা প্রশাসনকে তড়িঘড়ি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তোলার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের কথা মতো দুর্গতদের হাতে মুড়ি, চিড়ে, বিস্কুট, বেবিফুড, ত্রিপল তুলে দেওয়া হয়। বেবিফুড যাতে কোনওভাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ না হয় সেদিকে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির জন্য জেলাশাসকের নেতৃত্বে একটি করে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়। ওই টাস্ক ফোর্স ৪৮ ঘণ্টা ধরে বুলবুল বিধ্বস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শন করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বুলবুল আঘাত হানলেও ম্যানগ্রোভ অরণ্যের কারণেই প্রচুর ক্ষতি রোখা গিয়েছে। তাই বনদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে সুন্দরবনকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ থেকে বাঁচাতে ম্যানগ্রোভের যত্ন নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকাও। আগামী ১৩ নভেম্বর ওই এলাকাগুলি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর।
ছবি: পিণ্টু প্রধান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.