সঞ্জীব মণ্ডল, শিলিগুড়ি: ছ’লক্ষ টাকা দিলেই সেনাবাহিনীতে চাকরি পাকা৷ মাঠ কভার না করলেও চলবে৷ নাম কা ওয়াস্তে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে মেডিক্যাল পরীক্ষা দিলেই হবে৷ এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে শিলিগুড়ি শহরের বুকে দেদার চলছে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার৷ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে প্রতারণা চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করে শিলিগুড়ি পুলিশ। বিহারের বাসিন্দা ধৃতদের নাম ব্রিজকিশোর তিওয়ারি ওরফে বীরেন্দ্র দুবে, মনোজকুমার শর্মা, মশিরুব হক ও বীরেন্দ্র কুমার৷ ধৃতদের বুধবার শিলিগুড়ি আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাদের পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন৷ ধৃতদের কাছ থেকে প্রায় তিন লক্ষ টাকা, প্রচুর ভুয়ো কল লেটার অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার-সহ অন্যান্য নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷
অনেকদিন ধরেই এই চক্রের সম্পর্কে খবর আসছিল সেনার গোয়েন্দাদের কাছে। সেই মতো শুরু হয় নজরদারিও। মঙ্গলবার গভীর রাতে ওই চক্রের সদস্যদের শহরের একটি হোটেল থেকে গ্রেফতার করে শিলিগুড়ি পুলিশ৷ তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মালদহের মহম্মদ কামিজ রেজা নামে একজন অভিযোগে জানিয়েছেন, বিহারের কিছু লোক সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চাকরি দেওয়ার জন্য টাকা চাইছে। মাথা পিছু ছ’লক্ষ টাকায় রফা করেন তাঁরা। শিলিগুড়ির শালুগাড়াতে সেনাবাহিনীর এমইএসের মাধ্যমে তাঁদের নিয়োগ করা হবে বলে জানানো হয়। এজন্য ৬০ হাজার টাকা করে অগ্রিম দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা দিলেই চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার মিলবে৷ তার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হবে। আর এই পরীক্ষা করাতে হবে কোনও সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসককে দিয়েই। এভাবে মঙ্গলবার শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে তাঁদের আসার জন্য বলা হয়। এরপর বিষয়টি সন্দেহ হওয়াতে সেনা গোয়েন্দাদের মাধ্যমে পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে৷ তবে, একাজে শিলিগুড়ি হাসপাতালের কোনও চিকিৎসক জড়িত কি না তা দেখা হচ্ছে৷ না কি হাসপাতালকে সামনে রেখে ভুয়া চিকিৎসকের মাধ্যমে ওই পরীক্ষা করানো হত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন৷
এর আগে শিলিগুড়ির শালুগাড়াতে ভুয়ো অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে এমইএসে চাকরিতে যোগ দিতে এসে ধরা পড়ার নজির রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতরা চারজনই বিহারের সিওয়ান, নালন্দার ও পাটনার হলেও এই চক্রের সঙ্গে শিলিগুড়ির যোগসূত্র রয়েছে। তবে তারা কারা তা খুঁজে বের করতেই ধৃতদের এদিন হেফাজতে নেওয়া হয়৷ জানা গিয়েছে, ভুয়ো কল লেটার, অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারগুলি দেখে সহজে কারও বোঝার উপায় নেই, যে সেগুলি জাল৷ এত নিখুঁতভাবে এই জাল নথি তৈরির ঘাঁটির খোঁজে এখন পুলিশ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.