Advertisement
Advertisement

ঘরে ফিরবেন নেতাজি, এখনও অপেক্ষায় কাটোয়ার চট্টোপাধ্যায় পরিবার

কথা দিয়েছিলেন স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু।

Chatterjee Family is till waiting for Netaji
Published by: Utsab Roy Chowdhury
  • Posted:January 22, 2019 7:10 pm
  • Updated:August 17, 2021 4:56 pm  

ধীমান রায়, কাটোয়া: ১৯৪৫-এর ১৮ আগস্ট। হঠাৎ রেডিওতে ভেসে এল দুঃসংবাদ। তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। সেদিন বিশ্বাস করেনি দেশ। তারপর দিনের পর দিন কেটেছে। মানুষ না চাইলেও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু মানেনি কাটোয়ার চট্টোপাধ্যায় পরিবার। ২৩ জানুয়ারি এলে বেশি করে মনে পড়ে যায়। কাটোয়ায় কাটানো স্মৃতিবিজড়িত দিন আজ ইতিহাস। ঝাপসা হয়ে আসে চোখ। তবে গর্বে ফুলে ওঠে বুক। কাটোয়ার চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আমন্ত্রণে এসেছিলেন নেতাজি। সেবার তিনদিন কাটোয়ায় ছিলেন। যাওয়ার আগে নিজের মুখে জানান, সময় পেলে ফের আসবেন। মৃত্যুর খবর তাই আজও বিশ্বাস করে না চট্টোপাধ্যায় পরিবার। এখনও সুভাষের অপেক্ষা করছে কাটোয়ার চট্টোপাধ্যায় পরিবার। তবে শুধু এই পরিবার নয়, নেতাজির পদধূলি পেয়ে গর্বিত গোটা কাটোয়া। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, নিজে কথা দিয়ে গিয়েছিলেন। ফিরে আসবেন সুভাষ।

কাটোয়ার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় কাঠগোলা পাড়ায় রয়েছে জরাজীর্ন এক দোতলা বাড়ি। নিচে ফরোয়ার্ড ব্লকের কাটোয়া লোকাল কমিটির কার্যালয়। বাড়িটি কার্যত ধ্বংসের পথে। এই বাড়িতেই তিনদিন কাটিয়ে গিয়েছিলেন নেতাজি। কাটোয়ার কাছারিপাড়ার সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় ও তার বৃদ্ধা মা কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় (৬৫) থাকেন। সুদীপ্তবাবুর দাদু শ্যামরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনি নেতাজীর ডাকে আজাদ হিন্দ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। সুদীপ্তবাবু জানিয়েছেন, নেতাজির সঙ্গে দাদু শ্যামরঞ্জনের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। শ্যামরঞ্জনবাবুর আমন্ত্রণেই নেতাজি ১৯৩১ সালের ৩১ ডিসেম্বর কাটোয়ায় এসেছিলেন। নেতাজি কাটোয়ায় এসে তিনদিন ছিলেন কাঠগোলা পাড়ার এই বাড়িতে। সুদীপ্তবাবু বলেন, “তখন কাটোয়াতেও স্বদেশি আন্দোলনের জোরালো হাওয়া বইছে। তরুণ বিপ্লবীরা তাঁদের স্বপ্নের নেতাকে একবার চোখে দেখার জন্য দাদুর কাছে আবদার করেছিলেন। দাদু সেকথা নেতাজির কানে পৌছে দেন। তারপরেই নেতাজি কাটোয়ায় এসেছিলেন। তিনদিন থেকে তিনি তরুণ প্রজন্মকে স্বাধীনতা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে যান।” সুদীপ্তবাবুর দাবি, কাঠগোলা পাড়ার বাড়িতে থাকার সময় নেতাজির জন্য তাদের বাড়ি থেকেই খাবার নিয়ে যাওয়া হত।

Advertisement

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্যামরঞ্জনবাবু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়েই আলাপ হয়েছিল নেতাজির সঙ্গে। ১৯২৮ সালে কলকাতায় কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশন হয়েছিল। সেখানেও তিনি ছিলেন। পরে নেতাজির নেতৃত্বে গঠিত হওয়া ‘বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স ক্রপস’ সদস্য পদে যোগ দেন শ্যামরঞ্জন। নেতাজির ও অন্য বিপ্লবীদের সঙ্গে শ্যামরঞ্জনবাবু একাধিক জায়গায় গিয়ে বৈঠক করেছিলেন। নেতাজির সঙ্গে তোলা একটি ছবি আজও রয়েছে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের কাছে। কৃষ্ণাদেবী বলেন, “বিয়ের পর শ্বশুরমশাইয়ের কাছে এইসব গল্প শুনেছিলাম। নেতাজির সঙ্গে তোলা শ্বশুরমশাইয়ের এই ছবি আমাদের কাছে অমূল্য সম্পদ।” প্রত্যেক বছর ২৩ জানুয়ারি এই ছবিতে মালা পরায় চট্টোপাধ্যায় পরিবার।

কাটোয়ার বিধায়ক তথা পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কাঠগোলা পাড়ার বাড়িতে নেতাজি তিনদিন কাটিয়ে গিয়েছিলেন। একথা সকলেই জানি। ওই বাড়িটি আজও নেতাজি সুভাষ আশ্রম নামে পরিচিত। পুরসভা থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে বাড়িটি যাতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়।” কাটোয়ার নেতাজি সুভাষ আশ্রমের আজীবন সদস্য হিসাবে নেতাজির নাম আজও উল্লেখ আছে পুরনো ফলকে। আশ্রমের নিত্যদিনের কোনও কর্মকাণ্ড বলে কিছু নেই। তবে ফলকে আজও উজ্বল এক প্রতিশ্রুতির কথা– “জীবনে অবসরের সুযোগ পাইলে পুনরায় এখানে এসে অবস্থান করিব।” এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন স্বয়ং নেতাজি। তাই আজও সুভাষের ঘরে ফেরার অপেক্ষা করে কাটোয়া ও চট্টোপাধ্যায় পরিবার।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement