স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা ও ঝাড়গ্রাম: গা–ব্যথা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট। সব মিলিয়ে কোভিডের (Covid-19) মতো উপসর্গ! এই অজুহাতে শুক্রবার গোটা দিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বা NIA’র বিশেষ আদালত চত্বরে উপস্থিত থেকেও হাজিরা এড়ালেন ছত্রধর মাহাতো (Chatradhar Mahato)। অন্যদিকে, এক দশকেরও বেশি পুরোনো দু’টি মামলায় ছত্রধরকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে বিশেষ আদালতে আবেদন জানাল NIA’র আধিকারিকরা। যদিও এই আবেদনের প্রেক্ষিতে কোনও নির্দেশ এদিন দেয়নি আদালত। আগামী সোমবার এ ব্যাপারে চূড়ান্ত রায় জানাবেন NIA’র বিশেষ আদালতের বিচারক।
২০০৯ সালের ১৪ জুন লালগড়ের ধরমপুরে খুন হন সিপিএম নেতা প্রবীর মাহাত। এরপর ওই বছরই দিল্লি–ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়। এই দু’টি ঘটনাতেই জঙ্গলমহলের তৎকালীন জনসাধারণ কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতোর নাম উঠে আসে। আপাতত দু’টি মামলার তদন্তভার NIA’র হাতে রয়েছে। সেই সূত্রেই, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গত ২৫ ও ২৬ আগস্ট শালবনির কোবরা ক্যাম্পে ছত্রধরকে দু’দফায় ম্যারাথন জেরা করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। এরপর গত সপ্তাহে ছত্রধর মাহাতো–সহ ৩০ জন অভিযুক্তকে হাজিরার নির্দেশ দেয় NIA’র বিশেষ আদালত। লালগড় থানার আইসি মারফত ছত্রধর ও অন্যান্য অভিযুক্তদের সেই নির্দেশ ধরানো হয়। তারপরই এদিন সময়মতোই আদালতে উপস্থিত হন ছত্রধর। কিন্তু আদালতে মামলার শুনানি চলাকালীন তাঁকে গাড়ির মধ্যেই বসে থাকতে দেখা যায়। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। শুনানি পর্ব শেষ হতেই ছত্রধর যে গাড়িতে বসেছিলেন সেদিকে এগিয়ে আসতে দেখা যায় তার আইনজীবী কৌশিক সিনহাকে। ছত্রধরকে উদ্দেশ্য করে তিনি ইশারা করেন। তারপরই আদালত চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে যায় ছত্রধরের গাড়ি।
এরপর ওই গাড়িতেই বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে আসেন ছত্রধর। কিছুক্ষণ পরে আবার তিনি বেরিয়ে আসেন। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘গায়ে জ্বর। বুকে ব্যথা রয়েছে। শরীর অসুস্থ। পরীক্ষা করাতে এসেছিলাম।’’ উল্লেখ্য, জঙ্গলমহলের একদা নায়ক ছত্রধর হাইকোর্টের নির্দেশে দীর্ঘ কারাবাস কাটিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে লালগড়ের আমলিয়া গ্রামে ফেরেন। এর পরই ফের সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সৌজন্যে। সরাসরি তাঁকে রাজ্য কমিটিতে জায়গা করে দেন নেত্রী। কিন্তু ফের সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিতেই এনআইএ তৎপর হয়েছে বলে আগেই দাবি করেছিলেন ছত্রধর। শালবনি কোবরা ট্রেনিং ক্যাম্পে ২ দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘সম্প্রতি মূলস্রোতে ফিরেছি। রাজনীতিতেও ফিরেছি। তৃণমূলে যোগ দিয়ে বড় দায়িত্বও পেয়েছি। সেই কারণেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারীর সংস্থার তরফে আমার উপর এই চাপ তৈরি করা হচ্ছে।’’ এর আগে এই দু’টি মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেতে তিনি সম্প্রতি হাই কোর্টের দ্বারস্থও হয়েছিলেন। কিন্তু সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এনআইএকে শালবনিতে ছত্রধরকে জেরার অনুমতি দেন। এদিকে, এই মামলায় এনআইএ বিশেষ আদালতে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন অন্য চার অভিযুক্ত। তাদের সেই আবেদনও শুক্রবার নাকচ হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.