দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দফায় প্রচারে বেরিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলাম ও বর্তমান বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা। প্রচারসভার মাঝেই এক গ্রামবাসীর সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন আরাবুলপন্থী কয়েকজন। দু’পক্ষের বচসার জেরে ভেস্তে যায় কর্মসূচি।
নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বুধবার সকাল দশটা নাগাদ ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির প্রচারে ভাঙড়ের ২ নম্বর ব্লকের সাতুলিয়ার বেলেদোনা বাজারে যান তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। সঙ্গে পুত্র হাকিমুল-সহ ছিলেন এলাকার বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা-কর্মী। কিন্তু সভাস্থলে গিয়ে আরাবুল দেখেন ফাঁকাই পড়ে রয়েছে অধিকাংশ চেয়ার। লোকজনের কোনও দেখা নেই। এরপর তিনি নিজেই কয়েকটি চেয়ার ঠিকঠাক করে পেতে দেন। তাঁর সাগরেদরা ফোন করে লোক জোগাড়ের চেষ্টাও করেন। এর বেশ কিছুক্ষণ পর গুটিকতক লোক সভাস্থলের চেয়ার দখল করলেও অধিকাংশ চেয়ার ফাঁকাই পড়ে থাকে। ওই পরিস্থিতিতেই বক্তব্য রাখতে শুরু করেন আরাবুল। সেই সময় পথচলতি এক গ্রামবাসী বলেন, “এলাকার উন্নয়ন বলে কিছু নেই। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। অথচ সে দিকে নেতাদের খেয়াল নেই। এদিকে গ্রামে এসে সভা করছে।” এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন আরাবুল অনুগামী বেশ কয়েকজন। ওই ব্যক্তির দিকে রে রে করে তেড়ে যান তাঁরা। এমনকি তাঁকে ধাক্কাধাক্কিও করেন বলে অভিযোগ। অশান্তি বিরাট আকার ধারণ করলে আরাবুল ইসলাম নিজে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার চেষ্টা করলেও জনগণের বিক্ষোভের মুখে পড়ে ভেস্তে যায় “দিদিকে বলো” কর্মসূচি।
এ বিষয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে ভাঙড়ের ২ নম্বর ব্লকের বিভিন্ন রাস্তা বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এলাকার উন্নয়ণ বলে কিছু নেই। ভাঙড়ের নেতারা শুধু এলাকায় এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। তাঁরা কাজের কাজ কিছুই করেন না। এ প্রসঙ্গে আরাবুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়রা কিছু দাবি নিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। যদিও সভায় অশান্তির বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন তিনি।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার রাতে ভাঙড়ের ২ নম্বর ব্লকের বামনঘাটা পঞ্চায়েতের কোঁচপুকুরে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির প্রচারে যান ভাঙড়ের বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা। সেখানে বেশ কয়েকজন তাঁর উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। জিজ্ঞেস করেন, আপনি তো বলেছিলেন ভাঙড়ের উন্নয়ন করবেন। কিন্তু কোথাও তো কিছু হচ্ছে না। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। প্রত্যুত্তরে মন্ত্রী বলেন, “হ্যাঁ আমি বলেছিলাম ব্যাটে বলে এক হলে ছক্কা মারবো। কিন্তু তা হচ্ছে না। আপনারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন। এখানে সবার উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু সবাই আসেননি। আপনারা যদি আমার কাছে বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা চান তাহলে তো আমি তা দিতে পারব না। এগুলো পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি দেখে। হ্যাঁ, এটা ঠিক এই এলাকায় অনেক সমস্যা আছে। এখানে বুথ কমিটি, গ্রাম কমিটি নেই। আমি আপনাদের অভাব-অভিযোগ দিদিকে জানাবো।” তিনি পক্ষান্তরে পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আরাবুল ইসলাম, ভাঙড় ২ ব্লকের সভাপতি ওহিদুল ইসলামদের কটাক্ষ করে বলেন, “নেতাদের শুধু ফুলের মালা পরলে হবে না। মাঝে মধ্যে জুতোর মালাও পরতে হবে।” এদিন ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে রেজ্জাকে মোল্লার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য নান্নু হোসেন, তৃণমূল নেতা আবদুর রহিম মোল্লা-সহ অন্যান্যরা। যদিও ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে রেজ্জাকের পাশে দেখা যায়নি আরাবুল ইসলাম, ওহিদুল ইসলামদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.