নব্যেন্দু হাজরা: কুমোরটুলি নয়৷ মা জগদ্ধাত্রীকে রূপ দিতে চন্দননগরের কুমোরপাড়ার শিল্পীদের উপরই আস্থা পুজো উদ্যোক্তাদের৷ প্রায় ৩০-৩২ ফুট উচ্চতার প্রতিমা গড়তে ডাক পড়ে না কলকাতার কুমোরটুলি বা কৃষ্ণনগরের শিল্পীদের৷ মা দুর্গা মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন থিমে সেজে ওঠেন অন্যত্র৷ এখানে অবশ্য থিমের বিশেষ জায়গা নেই৷ মান্ধাতার আমলের মতোই বড় বড় ঠাকুর৷ তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাজ বদলেছে প্রতিমার৷ কোথাও সোলার, কোথাও জরি, আবার কোথাও সোনালি সাজ৷ কিন্তু মূর্তি রাখা হয়েছে একইরকম৷ তার জন্য আলাদা চালচিত্র থাকে প্রতিমার পিছনে৷
পুজো উদ্যোক্তাদের কথায়, এখানকার আলোকশিল্পীদের নাম তো গোটা বিশ্ব জানে৷ কিন্তু জানে না এখানকার প্রতিমা শিল্পীদের নাম৷ এত বড় বড় প্রতিমা তৈরি হয় এখানকার শিল্পীদের হাতেই৷ প্রত্যেক শিল্পীরই বারোয়ারি ঠিক করা থাকে৷ কেউ বা একই বারোয়ারিতে ঠাকুর বানান ১৫ বছর ধরে৷ আবার কেউ বা ত্রিশ বছর৷ সেই শিল্পী মারা গেলে তাঁর ছেলে বা বংশধর৷ এভাবেই সেজে আসছে চন্দননগরের জগৎ মা৷ কুমোরটুলিও তাই কালীপুজো শেষে কিছুটা অন্ধকার৷ হাতে গোনা কয়েকটি জগদ্ধাত্রীর অর্ডার আসে বটে৷ কিন্তু সেগুলো কলকাতার পুজোরই৷ তাই চন্দননগরে গিয়ে ঠাকুর বানান এমন শিল্পী খুঁজে পাওয়া দায় কুমোরটুলিতে৷
ষষ্ঠীতেই তাই আলোর উৎসবে ভাসছে প্রাক্তন ফরাসি উপনিবেশ৷ এখানকার আলোকশিল্পীদের শৈল্পিক নৈপুণ্যের কথা কারও অজানা নয়৷ এখানকার আলো যেমন গিয়েছে বিদেশে, তেমনই এবছরই এখানকার আলোয় দীপাবলিতে সেজেছে অমিতাভের বাড়িও৷ কিন্তু সাধারণ মানুষের অনেকটাই অজানা এখানকার প্রতিমাশিল্পীদের কথা৷ চন্দননগরের কুমোরপাড়াতেই অধিকাংশ প্রতিমাশিল্পীর বাস৷ প্রতিবছরই এই সময় তাঁদের মধ্যে চরম ব্যস্ততা৷ অনেকেই তিন-চারটি ঠাকুর তৈরির বরাত নেন৷ তবে এখানকার প্রতিমা আগে বানিয়ে রাখা যায় না৷ প্রতি বারোয়ারিরই কাঠামো থাকে৷ সেখানে গিয়েই কাঠামোতে ভর রেখে তৈরি হয় প্রতিমা৷ প্রথমে বিচালি দিয়ে তৈরি হয় ঠাকুর, তারপর দো-মেটে হয়, সবশেষে চক্ষুদান৷ দুর্গাপুজোর ভাসানের দিন এখানে হয় কাঠামো পুজো৷ প্রায় এক মাস ধরেই চলে প্রতিমা তৈরির কাজ৷
বাগবাজার সর্বজনীনের পুজো এবার ১৮২ বছরে পড়ল৷ চন্দননগরের উচ্চতায় বড় প্রতিমার মধ্যে এখানকার ঠাকুর অন্যতম৷ ৩৬ ফুটের প্রতিমা এখানে৷ প্রতিমা শিল্পীর নাম রবীন্দ্রনাথ পাল৷ গত ১৫ বছর ধরে তিনিই ঠাকুর বানান এখানে৷ এখানকার কোষাধ্যক্ষ অমিয় সাহা বলেন, “বরাবরই চন্দননগরের শিল্পীরাই এখানে প্রতিমা বানান৷ বাইরের কোনও শিল্পী আনা হয় না৷ এটা আমাদের ঐতিহ্য৷” মধ্যাঞ্চলের পুজো এবার ৪৬ বছরে পড়ল৷ আগে এখানকার প্রতিমা বানাতেন হরি পাল৷ এখন বানান তাঁর ছেলে অমিত পাল৷ পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক তিলক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এখানে কুমোরপাড়া থেকেই শিল্পীরা এসে ঠাকুর বানান৷ বাইরের কোনও শিল্পী আসেন না৷ চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীর এটাই বৈশিষ্ট্য৷ উত্তরাঞ্চলের পুজো এবার ৫০ বছর৷ এখানকার প্রতিমা শিল্পী কানাই পাল৷ প্যারিসের অপেরা হাউসের আদলে তৈরি হয়েছে এখানকার মণ্ডপ৷ ধুমধাম করে হচ্ছে চন্দননগরের বারাসতের চক্রবর্তী পাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজোও৷
এছাড়াও মানকুণ্ডু, জ্যোতি, নতুনপাড়া, নিয়োগিবাগানের মতো অধিকাংশ বারোয়ারির প্রতিমা বানান চন্দননগরের শিল্পীরাই৷ কারণ বরাবরই তেমনটাই হয়ে আসছে৷ আর এটাই চন্দননগরের রীতি৷ এখানকার শিল্পীদের উপরই ভরসা চন্দননগরের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.