দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: বিশ্বকাপ থেকে একে একে বিদায় নিয়েছে হেভিওয়েট দল। কিন্তু তার কোনও প্রভাবই পড়েনি চন্দননগরে। বিশ্বকাপের কয়েকঘণ্টা আগে প্রাক্তন ফরাসী এই উপনিবেশে উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। জায়গায় জায়গায় উড়ছে ফ্রান্সের পতাকা। কোথাও আবার ফ্রান্সের জার্সি পরে নিজের প্রিয় দলকে সমর্থনের প্রমাণ দিচ্ছেন ফুটবলপ্রেমীরা।
[ তোলাবাজির অভিযোগে পুলিশের জালে টিএমসিপির সাধারণ সম্পাদক ]
এই উন্মাদনার বীজ লুকিয়ে রয়েছে ১৬৭৩-৭৪ সালে। তখন এখানে রাজত্ব ছিল বাংলার সম্রাট ইব্রাহিমের। বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সুদূর ফ্রান্স থেকে ফরাসি বণিকরা চন্দনগরে এসেছিলেন। কিন্তু বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এসে ধীরে ধীরে চন্দননগরে ফরাসি উপনিবেশ গড়ে উঠতে শুরু করে। ক্রমে গোটা চন্দননগরটাই চলে যায় ফরাসিদের দখলে। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে চন্দননগর ফরাসিদের উপনিবেশ ছিল। এর ফলে চন্দননগরের শিল্প ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ফরাসি ঐতিহ্য। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো কিংবা আলোর জাদুতে আজও ফরাসি ছোঁয়ার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হলেও ফ্রান্স ১৯৫২ সালে চন্দননগরকে ভারতের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়। আজও চন্দননগরে ফরাসি স্থাপত্য তাদের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
উপনিবেশ চলে গেলেও ফ্রান্সের সঙ্গে চন্দননগরের নাড়ির টান এখনও যায়নি। ফুটবলের সময় তা যেন আরও বেশি করে জেগে ওঠে। এবছর ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে ফ্রান্স। সকাল থেকেই তাই চন্দননগরে উন্মাদনা চরম পর্যায়ে। চন্দননগর শহরের অনেক জায়গাতেই রবিবার ফ্রান্সের জাতীয় পতাকার নীল সাদা মোড়কে ঢেকে ফেলা হয়েছে। কেউ আবার ফ্রান্সের জাতীয় পতাকা হাতে উদ্দাম নাচে মেতেছে। কেউ আবার শাকিরার গানের তালে তালে পা মিলিয়েছে। কারোর গালে রং দিয়ে আঁকা হয়েছে ফ্রান্সের জাতীয় পতাকা। কেউ আবার সকাল থেকেই চন্দননগর স্ট্যান্ডে বল নিয়ে জাগলিং-এর খেলা দেখিয়ে গেছেন।
[ প্রাক্তন প্রেমিকার বন্ধুর মার, সিউড়িতে অপমানে আত্মঘাতী কলেজ পড়ুয়া ]
আজ থেকে ২০ বছর আগে আলোর জাদুর শহর উন্মাদনায় মেতেছিল। সেবার জিনেদিন জিদানের হাতে বিশ্বকাপ জ্বলজ্বল করেছিল। আজ জিদান নেই। কিন্তু আছেন পল পোগবা, এমবাপের মতো খেলোয়াড়রা। অনেকে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে ফ্রান্সের হাতে এবার বিশ্বকাপ উঠবে। তা ফলুক বা না ফলুক, আজকের এই দিনটিতে চন্দননগর যেন একটা মিনি ফ্রান্সে পরিণত হয়েছে। অন্তত একদিনের জন্যও চন্দননগরবাসীরা যেন ফরাসি হয়ে উঠেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.