নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: বিজেপির (BJP) বঙ্গ জয়ের স্বপ্ন আপাতত ধূলিসাৎ। তবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে বাংলার রাজনীতিতে তিন থেকে ৭৭-এ গেরুয়া শিবির। এবারের বিধানসভায় তারাই প্রধান বিরোধী দল। এই অবস্থায় এই ৭৭ বিধায়ককে ধরে রাখাই এখন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে চ্যালেঞ্জ হেরে যাওয়া প্রার্থীরা গেরুয়া সঙ্গ ত্যাগ করে ফের যাতে শাসক তৃণমূলের (TMC) ঝুঁকে না পড়েন, তা নিশ্চিত করা।
ভোটের আগে দলবদলুর ভিড়ে ভরে ছিল রাজ্য বিজেপির ঘর। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে দেখা গিয়েছে, তাঁদের সিংহভাগকে প্রত্যাখ্যান করেছেন রাজ্যের মানুষ। এর মধ্যেই সোমবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিজেপি থেকে যাঁরা তৃণমূলে ফিরতে চান, তাঁদের স্বাগত। বলাই বাহুল্য, তৃণমূল নেত্রীর এই আহ্বান আরও চিন্তা বাড়িয়েছে বিজেপি শিবিরে।
‘অপারেশন কমল’- দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে এই বিশেষ কৌশলকে এতদিন ব্যবহার করছে বিজেপি। এই কৌশল ব্যবহার করে দলের শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি, একাধিক রাজ্যে নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়ার নজিরও আছে বিজেপির নামের পাশে। কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ থেকে চলতি বছরের বিধানসভা ভোটের আগে কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরিতেও একই ঘটনা ঘটেছে। বাংলাতে অবশ্য বিজেপি নেতারা উদ্বিগ্ন দল বাঁচাতে। ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দল ছেড়ে যাওয়াদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তাই এই পরিস্থিতিতে যাতে তাদের ৭৭ বিধায়ক অটুট থাকেন, সেজন্যই এখন ঘনঘন আলোচনা করছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। কারণ অতীত বলছে, রাজ্যে পরপর দু’বার তৃণমূল সরকার গঠনের পর কংগ্রেস ও বামদল ছেড়ে একাধিক বিধায়ক শাসক দলে যোগ দিয়েছিল। সেই ছবি এবার বদলাতে ব্যস্ত গেরুয়া শিবির।
বাংলায় ভোট শেষ। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি। সেই বার্তাই ইতিমধ্যে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। বরং এবারই আসল কাজ শুরু হল বলে মনে করছেন তাঁরা। বাংলায় এবারের বিধানসভা ভোটের প্রচারে বিজেপির অন্যতম ইস্যু ছিল রাজনৈতিক হিংসা। সেই ইস্যুকে জিইয়ে রাখতে এবং তাকে সামনে রেখে শাসক তৃণমূলের উপর চাপ বাড়াতে ইতিমধ্যে কৌশল সাজিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই ভোট পরবর্তী হিংসায় ‘তপ্ত’ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলা। শাসক-বিরোধী মিলিয়ে রাজনৈতিক হিংসার বলি প্রায় একডজন।
বিষয়টি তাই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে গেরুয়া শিবির। ভোটে হারের রেশ রয়েছে, তার উপর রাজনৈতিক হিংসার ভয়ে দলীয় কর্মীদের মনোবলে যাতে চিড় না ধরে, সেই দিকেও এখন নজর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের।
রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে বিজেপি কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে কয়েকটি টুকরো ঘটনার মধ্যেই। যেমন হিংসা নিয়ে ইতিমধ্যেই রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর মন্ত্রক। মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিনই দিল্লি থেকে তড়িঘড়ি বাংলায় ছুটে গিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা। এর পাশাপাশি বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন বিজেপি নেতা গৌরব ভাটিয়া।
এই ঘটনায় একদিকে যেমন দলের সদ্য পরাজিতদের বরাভয় প্রদান করে তাঁদের নতুন করে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে, তেমন আবার দলীয় কর্মীরা যাতে ফের শাসকের ঘরের দিকে না ঝুঁকে যান, সেদিকেও বিশেষ নজর এখন বিজেপির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.