সুমিত বিশ্বাস,পুরুলিয়া: কখনও এই ওয়ার্ড, তো কখনও আরেকটি ওয়ার্ড। বারবার সংরক্ষণের কোপে পড়ে লড়াইয়ের জায়গা বদল করতে হয়েছে। বদলে গিয়েছেন রাজনৈতিক পরিচয়ও। কিন্তু পুর ময়দানে প্রতিপক্ষকে হেলায় উড়িয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন প্রতিবারই।
এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ‘সংরক্ষণ‘ প্রতিবন্ধকতাকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে আবারও ছক্কা হাঁকাতে পুর ময়দানে নেমেছেন ‘যাযাবর’ কাউন্সিলর তথা পুরপ্রধান শামিম দাদ খান। পুরুলিয়ার পুরসভার ন’নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। তাঁর যুদ্ধক্ষেত্র, ২২ নম্বর ওয়ার্ড এবার মহিলা সংরক্ষিত। ফলে তিনি জানেন না, দল তাঁকে কোন ওয়ার্ডের প্রার্থী করবে। তবে এটা জানেন, যেখানেই তাঁকে প্রার্থী করা হোক না কেন, তিনি সেখানেই প্রতিপক্ষকে কুপোকাত পুরসভার কুর্সিতে বসবেন।
আসলে তাঁর ট্র্যাক রেকর্ড এমনই নজরকাড়া। সেই ১৯৮১ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত তিনি ছ’বারের কাউন্সিলর। পুরুলিয়া পুরসভায় এই রেকর্ড শুধু শামিম দাদ খান ছাড়া প্রাক্তন পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায়েরই রয়েছে। এই দীর্ঘ চার দশকে দু’বার উপ পুরপ্রধান হন শামিম দাদ খান। রাজনীতিতে পরিপক্ক এই ব্যক্তি যে এবারও ভেল্কি দেখাবেন, তা জানে শহর পুরুলিয়া তৃণমূল থেকে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই পুরযুদ্ধে পুরোপুরি নামার আগে বিভিন্ন ওয়ার্ডেই নেট প্র্যাকটিস চলছে তাঁর। তবে তিনি নিজে এই বিষয়ে কিছুই বলতে চাইছেন না। হাসিমুখে তাঁর জবাব, “আমি তো ‘যাযাবর’। দল যেখানে বলবে, সেখানে প্রার্থী হয়ে আবার পুরসভার কুর্সিতে বসার চেষ্টা করব।” সামান্য হেসে, প্রায় ভাবলেশহীন মুখে এই জবাব দিলেও তা একেবারে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।
শামিম দাদ খানের ট্র্যাক রেকর্ড বলছে, এযাবৎ কালে তিনি সবচেয়ে বেশিবার ৮ নম্বর ওয়ার্ডেই প্রার্থী হন। পাঁচবার এই ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়ে শুধু ২০০০ সালেই হেরে যান। সেবার তিনি সিপিএম প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। প্রথম কাউন্সিলর হন এই পুর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই। চলেছে রাজনৈতিক দলবদলের পালা। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এই ওয়ার্ডে ছিলেন নির্দল কাউন্সিলর। ১৯৮৬–১৯৯৫ পর্যন্ত তাঁর পরিচয় ছিল সিপিএম কাউন্সিলর হিসেবে। ৯৫–এ সিপিএম তাঁকে টিকিট দেয়নি। ২০০০ সালে ওই আট নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের হয়ে প্রার্থী হয়ে হারতে হয় শামিম দাদ খানকে। তারপর জার্সি বদল করে কংগ্রেস যোগদান, ২০০৫-২০১০ পর্যন্ত ওই ওয়ার্ডের
কংগ্রেস কাউন্সিলর।
কিন্তু সেই ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় ২০১০ সালে ফের জার্সি বদল। তৃণমূল থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হন শামিম দাদ খান। ২০১০–২০১৫’এর মধ্যে উপ পুরপ্রধানের পদও পান। কিন্তু ২০১৫ সালে ওই ওয়ার্ড তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হলে তাঁকে যেতে হয় ২২ নম্বর ওয়ার্ডে। তৃণমূলের প্রতীকে সেখান থেকে জিতে প্রথমে উপপুরপ্রধান, তারপর পুরপ্রধান। এবার সেই ওয়ার্ডে মহিলা প্রার্থী। তাহলে কোথায় লড়বেন ‘যাযাবর’ কাউন্সিলর? ৮,৯ নাকি ১০ নম্বর ওয়ার্ডে? জবাবে শুধুই মুচকি হাসছেন পুরপ্রধান।
ছবি: সুনীতা সিং।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.