ফাইল ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনা ও বৈষম্যের ধারা বজায় থাকল। প্রবল প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও তার অন্যথা হল না। তবে কেন্দ্র টাকা না দিলেও উত্তরের ক্ষত মেরামতে জিটিএ-কে ২৪ কোটি টাকা দিচ্ছে নবান্ন। শুক্রবার নবান্নে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর সঙ্গে বৈঠক করেন জিটিএ প্রধান অনীত থাপা। তখনই মুখ্যসচিবের ফোনে অনীতের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। বিপর্যস্ত কালিম্পংয়ের পুনর্গঠনে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এর সঙ্গে জুড়ে দেবেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শনিবার দুপুরে কালিম্পংয়ের পরিস্থিতি পরিদর্শনে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
উল্লেখ্য, বিপর্যয়ের পর প্রধানমন্ত্রী সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন। সিকিমকে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তারপরই শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ফান্ড (সিডিআরএফ) থেকে সিকিমকে ৪৪.৮ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সেই একই ফান্ড থেকে কেন্দ্র বাংলার জন্য কেন বরাদ্দ মঞ্জুর করল না, উঠছে সেই প্রশ্নও। টাকা তো দূর অস্ত, শাহর মন্ত্রকের তরফে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিকিমের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাশে রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হলেও দীর্ঘ বিবৃতিতে বাংলার নাম একবারও উল্লেখই করা হয়নি। ওই প্রসঙ্গে টেনে এদিন অনীত থাপা কেন্দ্রের দু’মুখো নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো ভারতের মধ্যেই। আমাদের এখান থেকেও বিজেপির সংসদ রয়েছে। তবু আমাদের কেন টাকা দেবে না কেন্দ্র?’’ পরে অনীত থাপা ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে জানান, ‘‘সিকিমকে কেন্দ্র ৪৪.৮ কোটি টাকা দিচ্ছে। অথচ কালিম্পংয়ের জন্য কোনও ঘোষণা নেই, সাহায্য নেই। এই বৈষম্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’ জানা গিয়েছে, অনীত থাপা এদিন বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে ফের মুখ্যমন্ত্রী তঁাকে ফোন করেন ও প্রাথমিকভাবে ২৪ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে মুখ্যসচিব ফোন করে জানিয়ে দেন, পুনর্গঠনের কাজে কোন কোন বিষয় অগ্রাধিকার দিতে হবে। অনীত জানান, বিপর্যয়ের জেরে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিডিওরা জেলার সব প্রান্তে ঘুরছেন। পরিদর্শন শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরিষ্কার হবে। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, তিস্তার গ্রাসে অন্তত ৩০০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কালিম্পং জেলায়। বাংলা-সিকিম লাইফ লাইন ১০ নং জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গা ধসের কবলে।
বুধবার কালিংম্পংয়ে নিখোঁজ মানুষকে উদ্ধারে সেনা নামিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সিকিম সীমান্ত লাগোয়া কালিম্পং জেলার লাভা ব্লকের সানসে গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১ জন এখনও নিখোঁজ। এর মধ্যে ১০ জনই রংপো ফরেস্ট ভ্যালির বাসিন্দা। নিখেঁাজদের খোঁজে এদিনও অভিযান চালিয়েছে সেনা। যদিও চপার উড়লেও নামতে পারেনি। সামরিক বাহিনীর তল্লাশি অভিযানে ট্র্যাকার কুকুর, বিশেষ রাডারের দল নামানো হয়েছে। কিন্তু জলকাদার জন্য বেশিরভাগ জায়গায় পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না। সিংটামের বালি-পাথর সরিয়ে সেনাবাহিনীর গাড়ি উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকার ২৬টি ত্রাণশিবির খুলেছে। লাচেন ও লাচুংয়ে ৭০০ গাড়ির চালক, বাইকে যাওয়া ৩,১৫০ জন আটকে আছেন। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে কংক্রিটের ২৭৭টি বাড়ি পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। বারদাং এলাকা থেকে নিখোঁজ ২৩ জন সেনা জওয়ানের মধ্যে সাতজনের দেহ বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। একজনকে আগেই জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ১৫ জন নিখোঁজ জওয়ানের খোঁজ চলছে। ১০৩ জন নিখোঁজ রয়েছে। এর মধ্যে পার্কিযংয়ে ৫৯ জন, গ্যাংটকে ২২ জন, মঙ্গনে ১৭ জন এবং নামচিতে পাঁচজন নিখোঁজ আছেন। সিকিম প্রশাসনের তরফে মৃতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা এবং ত্রাণশিবিরে থাকা বিপন্নদের মাথাপিছু ২ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিন থেকে শিলিগুড়িতে দুটি জায়গায় হেল্পডেস্ক চালু করেছে রাজ্য সরকার। এনজেপি স্টেশন এবং তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসেও দুটি হেল্পডেস্ক চালু হয়েছে। সিকিম সরকারের সঙ্গে কথা বলে আটকে থাকা পর্যটকদের এদিনও ফেরানোর চেষ্টা করেছে নবান্ন। গ্যাংটক থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার সোজা পথ এই মুহূর্তে বন্ধ। তাই বিকল্প পথ ব্যবহার শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ি হয়ে গরুবাথান দিয়ে লাভা হয়ে গ্যাংটক যাচ্ছে ছোট গাড়ি। প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় লাগছে। এদিন ধস সরিয়ে রংপো থেকে সিংতামের দিকে একটি রাস্তা খুলে দেওয়া হয়। ফলে আপাতত দুটি রাস্তা খুলল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.