অনিন্দ্য সিংহ চৌধুরি: কথায় বলে স্বাস্থ্যই সম্পদ। সত্যিই তাই। শরীর যদি ভাল থাকে, তাহলে মনও থাকবে। যে কোনও কাজেই মিলবে উৎসাহ। বিশেষ করে শিশুদের তো স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হয়। তাই শুধু বাড়িতে নয়, স্কুলের টিফিনেও যাতে ‘স্বাস্থ্যকর’ খাবার থাকে, এই ব্যাপারে অবশ্যই সন্তানদের অভিভাবকদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
কিন্তু জেটগতির যুগে তো অনেক ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয় না। এখন বেশিরভাগ বাড়িতেই বাবা-মা, দু’জনেই চাকরি করেন। সকলেই ব্যস্ত। তাই সন্তানদের বাড়ির টিফিন দেওয়া বেশিরভাগ সময়ই হয়ে উঠে না। তাই তো স্কুলের ক্যান্টিন হোক বা বাইরের দোকানের পিৎজা, বার্গার, চপ, কাটলেটের মতো ‘জাঙ্ক ফুড’ খায় খুদে ছাত্র ও ছাত্রীরা। প্রত্যেকদিন এই খাবার খাওয়ার ফলে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে। সেই কারণে তো এখন স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের বাড়ির খাবার আনার জন্য জোর দিচ্ছেন। শুধু স্কুল নয়, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও যাতে ক্যান্টিনের খাবার বেশি না খেয়ে বাড়ির টিফিন আনে, সে ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন এ রাজ্যের অধ্যাপকরা। সবচেয়ে বড় কথা, স্কুলের মতোই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ‘টিফিন বক্স’ আনার ব্যাপারে শিক্ষকমহল উৎসাহ দিচ্ছে।
এই যেমন সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা মিনাল পারেখ তো স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন যে, ‘‘স্কুল হোক কলেজ, জাঙ্ক ফুড একদম খাওয়া উচিত নয় ছাত্র-ছাত্রীদের। স্বাস্থ্যের ক্ষতি তো হয়ই, কোনটা খাবার শরীরের জন্য ভাল, সেটাও জানা জরুরি। কেননা, অনেক সময় দেখা যায়, ক্যান্টিনে খাবারের মান মোটেও ভাল থাকে না। তাই আমি তো মনে করি, শুধু স্কুল নয়, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ‘টিফিন বক্স’ আনতেই পারে। তাতে শরীরও যেমন ভাল থাকবে, পয়সাও অনেক বেঁচে যাবে।’’ আসলে, চিকিৎসকরা বারবার বারণ করছেন, বিশেষ করে পড়ুয়াদের যতটা সম্ভব ‘জাঙ্ক ফুড’ এড়িয়ে চলার জন্য। আর সেই কথা মাথায় রেখেই আগামী ডিসেম্বর থেকে দেশের স্কুলগুলির ক্যান্টিনে কোনওরকম ‘জাঙ্ক ফুড’ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া। শুধু তাই নয়, স্কুল ক্যান্টিনে যাতে জাঙ্ক ফুডের কোনও বিজ্ঞাপনও ব্যবহার না হয়, সে ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে। পাশাপাশি, স্কুলের ৫০মিটারের মধ্যে যাতে চিপস, নুডলসের মতো জাঙ্ক ফুডের কোনও বিজ্ঞাপন না থাকে, সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্থাস্থ্য মন্ত্রকের ওই সংস্থাটি ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্টান্ডার্ডস রেগুলেশনস ২০১৯’ তৈরি করেছে। আর সেই নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্র সরকার চাইছে, স্কুল পড়ুয়ারা যাতে জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে বাড়ির তৈরি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খায়। আর কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন এ রাজ্যের সকল স্কুল কর্তৃপক্ষ। রামমোহন মিশন স্কুলের প্রিন্সিপাল সুজয় বিশ্বাস যেমন জানালেন, ‘‘একেবারে সদর্থক পদক্ষেপ। শুধু খেতে বারণ করলেই চলবে না। কেন জাঙ্ক ফুড খারাপ, তার ক্ষতিকর দিকগুলি কী কী, তা প্রত্যেক স্কুলে প্রচার করাও সমান জরুরি।’’ একই সুর শোনা গেল মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাসের গলাতেও। তিনি জানালেন ‘‘খুবই ভাল পদক্ষেপ। স্কুলের মতোই কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনেও জাঙ্ক ফুড নিষিদ্ধ করা উচিত।’’ একই সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, ‘‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনে কী কী স্বাস্থ্যকর খাবার রাখা হবে, সোজা কথায়, জাঙ্ক ফুডের বিকল্প স্বাস্থ্যকর খাবারের একটা তালিকা দেওয়াটাও জরুরি।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.