জ্যোতি চক্রবর্তী ও সুরজিৎ দেব: আমফানের তাণ্ডবের দু’সপ্তাহ পর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা শুক্রবার সরেজমিনে খতিয়ে দেখলেন উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। কথা বললেন দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গেও। জেলা প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। শনিবার নবান্নে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা-সহ অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। তারপর আমফানের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কেন্দ্রকে রিপোর্ট জমা দেবেন তাঁরা।
শুক্রবার সকাল দশটা নাগাদ চার সদস্যের প্রতিনিধি দল সন্দেশখালির ধামাখালিতে পৌঁছয়। চার সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলে ছিলেন ঋষিকা সরন, নরেন্দ্র কুমার, আরকে দুবে ও সমীরণ সাহা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিলেন জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী, বসিরহাটের মহকুমা শাসক বিবেক ভাসমে, বসিরহাটের পুলিশ সুপার কংকরপ্রসাদ বারুই, সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাত, সরবেড়িয়া আগারআটি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শেখ শাহজাহান-সহ রাজ্যের সেচ বিভাগের আধিকারিকরা।
ধামাখালিতে একটি বেসরকারি অতিথি আবাসে প্রথমে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রতিনিধিদের আমফানে ক্ষয়ক্ষতির নমুনা দেখানো হয়। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে লঞ্চে করে সন্দেশখালির তুষখালি, বেলেখালি, বেড়মজুর ১ ও ২ পঞ্চায়েত, ন্যাজাট ১ ও ০২ পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধিরা দুর্গত মানুষের সঙ্গে কথাও বলেন। দুপুরে ধামাখালিতে ফিরে মধ্যাহ্নভোজের পর বিকেলে প্রতিনিধিরা মিনাখাঁ ব্লকের কয়েকটি দুর্গত গ্রাম পরিদর্শন করেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যুগ্মসচিব অনুজ শর্মার নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আমফানের দাপটে ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখতে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় যান। হেলিকপ্টারে সকাল দশটা নাগাদ কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা পাথরপ্রতিমায় এসে নামেন। অনুজ শর্মা ছাড়াও প্রতিনিধি দলের বাকি দুই সদস্য হলেন এক্সপেন্ডিচার বিভাগের ডিরেক্টর এস সি মীনা ও জলশক্তি বিভাগের সুপারিন্টেডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সিদ্ধার্থ মিত্র। শুক্রবার দলটি হেলিকপ্টারে সুন্দরবনের গোসাবার বিভিন্ন দ্বীপ ঘুরে দেখে। সেখানে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার ছবিও তোলেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের কতটা ক্ষতি হয়েছে তাও খতিয়ে দেখেন তাঁরা।
কেন্দ্রীয় দলটিকে নিয়ে যাওয়া হয় পাথরপ্রতিমা কলেজে। সেখানেই জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা সেরে নেন তাঁরা। পাথরপ্রতিমার কোন কোন এলাকায় আমফান কতটা থাবা বসিয়েছে এবং সাধারণ মানুষের নানা দুর্দশার ছবি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দলের সদস্যদের দেখানো হয়। এরপর সড়কপথে অনুজ শর্মার নেতৃত্বে দলের সদস্যরা উত্তর গোপালনগরে যান। সেখানে দুর্গত মানুষজনের সঙ্গে কথা হয় তাঁদের। ঝড়ে বিপর্যস্ত বাসিন্দাদের কাছে দলের সদস্যরা অভাব অভিযোগের কথা জানতে চান। বাসিন্দারা কেন্দ্রীয় দলের কাছে পাকাপোক্ত নদীবাঁধ তৈরির দাবি জানান।
তারপর শ্মশানঘাট এলাকা থেকে লঞ্চে উঠে রামগঙ্গার ভারাতলা, ব্রজবল্লভপুরের গোবিন্দপুর আবাদ, ছোট রাক্ষসখালি জি প্লটের কৃষ্ণদাসপুর, তটের বাজার এলাকা লঞ্চ থেকেই পর্যবেক্ষণ করেন। তবে নদীতে স্রোত বেশি থাকায় বেশিদূর প্রতিনিধি দলের লঞ্চ এগোতে পারেনি। পরে কেন্দ্রীয় দলটি পাথরপ্রতিমায় ফিরে এসে সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু ঘরবাড়ি ঘুরে দেখেন। জেলাশাসক পি উলগানাথন ছাড়াও কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে ছিলেন জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। ছিলেন পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানাও। অনুজ শর্মা জানান, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় আমফানের তাণ্ডবে কতটা ক্ষতি হয়েছে তা তাঁরা দেখতে এসেছেন। ক্ষয়ক্ষতি সরেজমিনে দেখে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁরা একটি রিপোর্ট পেশ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.