চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: তরল বর্জ্য নিষ্কাশন প্রকল্পে আসানসোল,দুর্গাপুর-সহ রাজ্যে ৩৮টি শহরের জন্য কেন্দ্র অর্থ মঞ্জুর করলেও, রাজ্যের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। ফলে অর্থ পড়ে রয়েছে কেন্দ্রীয় কোষাগারেই। কোথাও এনিয়ে কোনও কাজ না হওয়ায় এবার কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে চিঠি দেওয়া হল। আর সেই চিঠিই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে ফের রাজ্যের সমালোচনায় সোচ্চার হলেন বাবুল সুপ্রিয়।
সূত্রের খবর, ৫ বছর আগে আসানসোল ও দুর্গাপুরের মতো শহরে তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছিল। একই প্রকল্পে এরাজ্যের ৩৮টি শহরের জন্য মঞ্জুর করা হয় মোট ৩,৭৮৯ কোটি টাকা। কিন্তু ওই প্রকল্পগুলি নিয়ে রাজ্য কোনও সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগয। ফলে বরাদ্দ অর্থও এসে পৌঁছায়নি আর বর্জ্য নিষ্কাশন নিয়েও কোনও কাজ হয়নি শহরগুলিতে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে এনিয়েই চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর।
চিঠিটি ফেসবুকে পোস্ট করে নিজের সংসদীয় এলাকা আসানসোলে বর্জ্য নিষ্কাশন ও স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাবুল সুপ্রিয়। তিনি লিখেছেন, আসানসোলের জন্য ৩৮৪.৯৬ কোটি টাকা ও দুর্গাপুরের জন্য ২৮৭.৫৩ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েও টেন্ডার হয়নি। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বা কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রসঙ্গও তুলেছেন তিনি। বাবুল বলেন, ‘২০১৪ সালে কেন্দ্রের নগর উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন মধ্যপ্রদেশে স্বচ্ছতা ও বর্জ্য নিষ্কাশন রেওয়া প্রকল্প দেখে আমি সেখানকার মিউনিসিপ্যাল কমিশনারের থেকে বিস্তারিত জেনেছিলাম। তারপরেই আসানসোলেও এই কাজটি রূপায়ণের জন্য সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের মিশন ডিরেক্টর প্রবীণ প্রকাশ ও রেওয়ার আধিকারিকদের নিয়ে কলকাতায় বৈঠক করি। উপস্থিত ছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তখনই একটি সুন্দর প্রকল্প রূপায়ণ হয়েছিল যে কেন্দ্র, রাজ্য, আসানসোল পুরনিগম ও হাডকো মিলে কাজটি করবে। হাডকো থেকে ঋণও মঞ্জুর করেছিলাম। কিন্তু পরে অজ্ঞাত কারণে রাজ্য ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি।’
তাঁর আরও অভিযোগ, স্বচ্ছতা নিয়েও রাজনীতি হয়েছে। যার জন্য কেন্দ্রের মঞ্জুর করা তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য প্রায় ৪০০০ কোটি টাকা ব্যবহারই হয়নি। বাবুল সুপ্রিয় বলেন, আসানসোল শহর ঢুকতে জঞ্জালের স্তুপ রয়েছে। নীল-সাদা প্রাচীরে আড়ালে ঢেকে দেওয়া হয়েছে জঞ্জাল। বর্জ্য নিষ্কাশন নিয়ে পরিবেশ আদালতের কড়া নজরদারি রয়েছে। এপ্রিলে দিল্লিতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী, ছ’মাসের মধ্যে রাজ্যের মডেল শহরগুলিতে ২০১৬ সালের বর্জ্য নিষ্কাশন আইন কঠোরভাবে লাগু করতে হবে। তাই ‘মডেল সিটি’র তকমা পাওয়া আসানসোল ও দুর্গাপুরেও দ্রুত তা চালু করার নির্দেশ রয়েছে।
এই বিষয়ে আসানসোল পুরনিগমের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে, বাবুল সুপ্রিয়র ওই পোস্ট নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে যান। কটাক্ষ করে বলেন, ‘আমি শুনেছি, উনি বিদেশে চিকিৎসা করাতে গেছেন। ওখান থেকে ফিরে ওনার অন্য কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন পড়লে আমরা আছি।’ অর্থাৎ পরোক্ষে যে তিনি বাবুলের মানসিক চিকিৎসার দিকে ইঙ্গিত করলেন, তা স্পষ্ট। তবে মেয়র প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেলেও জানা যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই আসানসোলের পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার উন্নয়নে তৈরি হবে সুয়েজ প্রকল্প। তাতে কেন্দ্রের ওই ৩৮৪ কোটি টাকা ব্যবহার হবে। এই প্রকল্পের সমীক্ষাও হয়ে গেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.