সম্যক খান, মেদিনীপুর: এক-দু’জন নয়, ১২১ জন। একটি মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে ব্লক সভাপতি থেকে শুরু করে কেশপুরের এতজন তৃনমূল নেতাকে ডাকছে সিবিআই (CBI)। খড়গপুর ডিআরএম অফিসে সিবিআইয়ের অস্থায়ী দপ্তরে তাঁদের হাজির হওয়ার কথা বলা হয়েছে। শনিবার থেকে জেরা চলছে। আর নোটিস পেয়ে, অথবা জেরার মুখোমুখি হয়ে তাঁরা আকাশ থেকে পড়ছেন। সুশীল ধাড়া নামে যে ব্যক্তির খুনের মামলায় এতজনকে নোটিস, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভরতি হন। তারপর তাঁর মৃত্যু হয় বলেই এতদিন জানতেন সকলে। অথচ ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে সেই মৃত্যুকে যুক্ত করে শাসকদলের নেতাদের ডাকা হচ্ছে বলে খবর।
স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল (TMC) এটিকে প্রতিহিংসার রাজনীতি বলে সরব। সহকর্মীদের কাছে নোটিসের বিষয়টি জানার পরই কলকাতায় রাজ্য নেতাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন কেশপুরখ্যাত জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ রফিক। তিনি ফোনেই পুরো ঘটনা বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষকে। কুণালবাবু প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিয়েছেন।
ওই মামলায় মূল অভিযুক্ত শরৎ সহিস-সহ ১২১ জনকে আসামি করা হয়েছে। যার মধ্যে মহম্মদ রফিক, বর্তমান ব্লক সভাপতি উত্তম ত্রিপাঠী, প্রাক্তন ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান-সহ কেশপুরের ব্লক, অঞ্চল ও বুথের সব নেতার নাম আছে। রফিকবাবু বলেছেন, “সিবিআইকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে বিজেপি। এর পিছনে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর চক্রান্ত আছে। যে মৃত্যুর সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ বিন্দুমাত্র নেই, সেই ঘটনায় শতাধিক নেতা কর্মীকে ডাকা হচ্ছে!”
সুশীল ধাড়ার (৪২) মৃত্যু হয়েছে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর। প্রায় একমাস পর তাঁর মেয়ে সঙ্গীতা ধাড়া চৌধুরী অভিযোগ দায়ের করেন। দাবি করেন, গত ১৯ আগষ্ট বিকেলে এফআইআরে নাম থাকা অভিযুক্তরা তাঁর বাবাকে কৈগেড়্যার বাড়ি থেকে স্থানীয় বাজারে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে। ২ লক্ষ টাকা দাবিও করে। কিন্তু বাবা রাজি না হওয়ায় তাঁকে বাঁশ দিয়ে মারধর করা হয়। মেদিনীপুর হাসপাতালে গত ২২ তারিখ গভীর রাতে মৃত্যু হয় সুশীল ধাড়া। এই মৃত্যু নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, “শতাধিক মানুষ একজনকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলল ভরা বাজারে? সেখানে শতাধিক নেতা কর্মী হাজিরও থাকলেন? এটা কতখানি বাস্তবসম্মত? আসলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের দূর্গ কেশপুরে সিবিআইকে সামনে রেখে হানা দিতে চাইছে বিজেপি। এতজনকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে যাতে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা যায়। এতে রাজনৈতিক লাভ হবে না বিজেপির।”
ওই মৃত্যুর ঘটনাতেই জেরা চলছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিযুক্তদের নোটিস পাঠাচ্ছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার গৌরব মালিক। ডাকা হচ্ছে খড়গপুরের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার অফিসের ১৪০ নম্বর ঘরে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্প অফিসে। গত শনিবার ডাক পেয়েছিলেন এফআইআরে এক নম্বরে নাম থাকা শরৎ সহিস, ব্লক কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বাদল মণ্ডল-সহ তিনজন। রবিবার জেরা হয়েছে ঝেঁতলার অঞ্চল সভাপতি ভাস্কর চক্রবর্তী-সহ সাত জনের। তাদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ জানতে চাওয়া হয়েছে। এমনকি হাসপাতালে ভরতি থাকা অবস্থায় সুশীল ধাড়াকে তারা দেখতে গিয়েছিলেন কিনা তাও জানতে চাওয়া হয়। তবে শরৎ, বাদল, ভাস্কর জানান, সিবিআইকে সবরকম সহযোগিতা তাঁরা করছেন। তাঁরা জানতেন সুশীলবাবু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন। সে কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ওই এফআইআরে ৭১ নম্বরে নাম আছে মহম্মদ রফিকের। ৪৩ ও ৫৪ নম্বরে নাম আছে যথাক্রমে সঞ্জয় পান ও উত্তম ত্রিপাঠির।
এই ঘটনার পিছনে বিজেপির (BJP) নোংরা রাজনীতি দেখছেন জেলার তৃণমূল নেতারা। সকলেই বলেছেন, “কেশপুরে বামেরা বিরোধীদের হাঁটাচলাও নিয়ন্ত্রণ করত। তাদের সন্ত্রাসের সামনে অনেক লড়াই করে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে। সেখানে এখন বিরোধী দল বিজেপি তাদের দু-চারজন সমর্থক নিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করে। কোনও বাধার মুখে পড়তে হয় না। কিন্তু কোনও জনসমর্থন নেই তাদের। তাই সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.